গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে ১০ হাজার লাশ
গাজায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৭ জন নিহত। নিহত বেড়ে ৩৪ হাজার ৫৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে হামাস ও ইসরায়েল উভয়ের ওপর চাপ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও স্থাপনার নিচে প্রায় ১০ হাজার মরদেহ পড়ে আছে। এসব মরদেহে পচন ধরায় রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। গাজার নাগরিক সুরক্ষা সংস্থা এ কথা জানিয়েছে। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে নাগরিক সুরক্ষা সংস্থা বলেছে, বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও স্থাপনার ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার হাজার মরদেহ থাকায় রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হওয়ায় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এসব মরদেহ দ্রুত পচতে শুরু করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৩৪ হাজার ৫৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাড়ে ১৪ হাজার শিশু ও সাড়ে ৯ হাজারের বেশি নারী রয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৭৭ হাজার ৭০৪ ফিলিস্তিনি।
তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এসব মরদেহ দ্রুত পচতে শুরু করেছে। এতে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে।
তবে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও স্থাপনার নিচে পড়ে থাকা হাজার হাজার মরদেহ হিসাবের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় উদ্ধারকর্মীরা জীবিত ব্যক্তিদের উদ্ধারে জোর দিচ্ছেন। শুধু হাসপাতালে পৌঁছানো মরদেহের ভিত্তিতে হতাহতের পরিসংখ্যান দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
হামাসের জবাবের অপেক্ষা
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করে আসছে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। গতকাল হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের দেওয়া সর্বশেষ পাল্টা প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল সফরে যাওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের।
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এবং বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির বিনিময়ে বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে তারা।
মিসরের কায়রোতে আলোচনা শেষে কাতারে ফিরে গেছে হামাস প্রতিনিধিদল। সেখানে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ধারণা ও প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। হামাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তাবের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে তারা আগ্রহী। লিখিত জবাব নিয়ে হামাসের প্রতিনিধিদলটি মিসরে ফিরবে বলে মিসরে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে উভয় পক্ষের ওপরই চাপ বাড়িয়েছে ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এরই অংশ হিসেবে এ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর সপ্তমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
সফরের শুরুতে সৌদি আরব পৌঁছান ব্লিঙ্কেন। সেখান থেকে জর্ডানে যান তিনি। আজ বুধবার তাঁর ইসরায়েলে পৌঁছানোর কথা।
‘চুক্তি হোক না–হোক রাফায় অভিযান’
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় স্থল অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকতে তেল আবিবকে চাপ দিয়ে আসছে দেশটি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গাজা যুদ্ধবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে গতকাল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ‘চুক্তি হোক না–হোক’ রাফায় স্থল অভিযান চালাবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে আমরা রাফায় প্রবেশ করব এবং সেখানে থাকা হামাসের ব্যাটালিয়নগুলো নিশ্চিহ্ন করব, চুক্তি হোক কিংবা না হোক।’
বেইজিংয়ে হামাস-ফাতাহ আলোচনা
এদিকে নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আলোচনার জন্য ফিলিস্তিনের বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ ফাতাহ ও হামাসের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ‘নিবিড় ও খোলামেলা’ এক আলোচনায় অংশ নিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ফিলিস্তিন ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট (ফাতাহ) এবং ইসলামিক রেসিট্যান্স মুভমেন্টের (হামাস) প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বেইজিং সফর করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় ‘ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে’।
ইইউর কয়েকটি দেশ স্বীকৃতি দিতে পারে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কয়েকটি দেশ মে মাসের শেষ নাগাদ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে। ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল গত সোমবার এ কথা জানিয়েছেন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিতে সৌদি আরব সফর করছেন তিনি। রিয়াদে সম্মেলনের ফাঁকে বোরেল এ কথা বলেন।