ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার এখনই সময়: জাতিসংঘ
ইরানের পরমাণু চুক্তিকে বাঁচাতে এ চুক্তির সঙ্গে জড়িত বিশ্বশক্তি এবং তেহরানকে এখনই কাজ শুরু করতে বলেছেন জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। সতর্ক করে তিনি বলেছেন, ‘এ চুক্তির সফলতা বা ব্যর্থতা আমাদের সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।’
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ২০১৫ সালে তেহরানের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের একটি চুক্তি হয়। এ চুক্তি জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত।
২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন। এরপর ইরানও ওই চুক্তির পরমাণু সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে থাকে।
মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক উত্তেজনা হ্রাসে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনার জন্য গত মাসের শেষ দিকে ইউরোপ ও ইরানের কূটনীতিকেরা বৈঠক করেছেন। সেখানে তেহরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়।
এরই মধ্যে, নভেম্বরের নির্বাচনে জিতে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি শপথ গ্রহণ করবেন।
জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক প্রধান রোজমেরি ডিকার্লো নিরাপত্তা কাউন্সিলে বলেছেন, ‘এটি (ইরানের পরমাণু চুক্তি) নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করার এখনই সময়। যেহেতু দায়িত্ব জেসিপিওএ এর অংশীদার ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর, তাই এর সাফল্য বা ব্যর্থতা আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ওই অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্য) পক্ষে আর অস্থিরতা গ্রহণ করা সম্ভব না।’
এদিকে, এ মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি নিরাপত্তা পরিষদে একটি চিঠি পাঠিয়ে বলেছে, যদি প্রয়োজন হয়, তবে ইরানের পরমাণু অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ হয়ে ওঠা আটকাতে তারা দেশটির ওপর সব ধরনের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুত আছে।
জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের উপরাষ্ট্রদূত জেমস কারিউকি গতকাল মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, ‘ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র পড়া আটকাতে আমরা সব ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এমনকি প্রয়োজন পড়লে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনা হবে।’
এ বিষয়ে জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেছেন, তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনা বেআইনি ও এর ফলাফল উল্টো হবে। তিনি আরও বলেন, ‘ইরানকে ভয় দেখাতে যে অস্ত্রের অপব্যবহার করার কথা আপনারা ভাবছেন, সেই নিষেধাজ্ঞা আরোপের অস্ত্র আপনাদের হাতে নেই। ইরান স্পষ্ট করে বলছে, যদি এ ধরনের উসকানিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে এবং সেটা নেওয়া হবে সমান প্রতিক্রিয়ায়।’
জাতিসংঘের পরমাণুবিষয়ক নজরদারি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) এ মাসে তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইরান নাটকীয়ভাবে তাদের বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ বাড়াচ্ছে। দেশটি ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করছে। পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে প্রায় ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন পড়ে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি থেকেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে।