ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রকে দুষছে রাশিয়া
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে নিয়ে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রকে দুষছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তিনি বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অভ্যন্তরে উড়োজাহাজ চলাচল সংকটের মুখে পড়েছে।
বর্তমানে এক বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে লাভরভ কাজাখস্তানে আছেন। সেখানেই তিনি এসব কথা বলেন।
গত রোববার আজারবাইজানসংলগ্ন ইরান সীমান্তে একটি বাঁধ উদ্বোধন করে ফেরার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি। এটি ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভারজাকান এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ান এবং আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ প্রাদেশিক কর্মকর্তাও ওই হেলিকপ্টারে ছিলেন। তাঁরা সবাই নিহত হয়েছেন।
এ দুর্ঘটনার পেছনের কারণ হিসেবে লাভরভ বলেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় তাদের তৈরি উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ ইরানে সরবরাহের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর মধ্য দিয়ে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।’
লাভরভ আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রবাসী এটি অস্বীকার করে। কিন্তু সত্যিটা হলো, বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। এর ফলে তারা উড়োজাহাজসহ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্র মেরামতে খুচরা যন্ত্রাংশ পায় না।’
ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, রাইসি যে হেলিকপ্টারে ছিলেন, সেটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ২১২ মডেলের। কেন এ দুর্ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও বড় বড় কয়েকটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের আরোপিত কয়েক দশকের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের পক্ষে তাদের উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ পাওয়া বা হালনাগাদ করা কঠিন হয়ে উঠে।
১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ২১২ হেলিকপ্টার বাজারজাত শুরু হয়। গত শতকের সত্তরের দশকে ইরান এই মডেলের বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার কেনে। সেই সময় ইরানের শাসনক্ষমতায় ছিলেন মোহাম্মদ রেজা পাহলভি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শাহের পতন ঘটার পরও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে ইরান। অনেকটি এখনো ইরানের বহরে আছে। তবে বিপ্লবের পর তেহরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব মেরামতে যন্ত্রাংশ কেনাটা ইরানের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে।
২০১৯ সালের হিসাবে ইরানের ২৩টি এয়ারলাইনসের বহরে ৩ শতাধিক উড়োজাহাজ ছিল। সেই সময় এর মধ্যে মাত্র ১৫৬টি উড়োজাহাজ চলাচল করছিল। অর্থাৎ অর্ধেক উড়োজাহাজ বসে থাকছিল। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির দেওয়া তথ্যমতে, মেরামতের জন্য যন্ত্রাংশ না থাকায় এসব উড়োজাহাজ বসিয়ে রাখা হয়েছে। মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না পাওয়ার কারণে এসবের নিরাপত্তা নিয়েও দেখা দেয় উদ্বেগ।
ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানে অসংখ্য বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব বিমানের প্রায় সবই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। সাম্প্রতিক সময়ে বেল ২১২ হেলিকপ্টারের সুরক্ষাব্যবস্থা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ২০২১ সালে কানাডা জানায়, তারা আর বেল ২১২ মডেলের হেলিকপ্টার ব্যবহার করবে না। বেল ২১২ নিয়ে করা এক তদন্তে এই হেলিকপ্টার উড্ডয়নের সময়ে নানা যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি উঠে আসার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয় কানাডা।