সাত মাস ধরে নিখোঁজ মার্কিনিকে পাওয়া গেল দামেস্কের কাছে, ছিলেন আসাদের কারাগারে
সিরিয়ার কারাগারে কয়েক মাস ধরে বন্দী থাকা এক মার্কিন নাগরিক মুক্তি পেয়েছেন। দেশটিতে বিদ্রোহীরা বাশার আল-আসাদ সরকারকে উৎখাত করার পর মুক্তি পান তিনি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সিরিয়া যাওয়ার পর তাঁকে আসাদ সরকার গ্রেপ্তার করেছিল।
সিবিএসকে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাঁর নাম ট্র্যাভিস টিমারম্যান। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে তাঁকে স্থানীয় বাসিন্দারা খুঁজে পান।
এই মার্কিন নাগরিক এমন একসময় উদ্ধার হলেন, যখন সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধারা ঘোষণা দিয়েছেন যে তাঁরা বাশার আল-আসাদের কুখ্যাত কারাগারগুলো বন্ধ করে দেবেন। আর এসব কারাগারে বন্দীদের নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদেরও খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর কিছু সময় পর্যন্ত তিনি ভয়ে ছিলেন। এরপর একটা ঘুমানোর জায়গা খুঁজছিলেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে খাবার ও অন্যান্য সহায়তা দেন।ট্র্যাভিস টিমারম্যান, মার্কিন নাগরিক
স্বৈরাচারী আসাদকে হটাতে নেতৃত্ব দেওয়া বিদ্রোহীদের নেতা আহমেদ আল-শারা (আবু মোহাম্মদ আল–জুলানি নামেও পরিচিত) বলেছেন, ‘আমরা সিরিয়ায় তাঁদের (আসাদ সরকারের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের) খুঁজে বের করব। আর এরই মধ্যে যাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তাঁদের ফেরত পাঠাতে আমরা বিভিন্ন দেশের কাছে সহায়তা চেয়েছি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, টিমারম্যান একটি সোফায় শুয়ে আছেন। আর সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। টিমারম্যান বলেন, সাত মাস আগে সিরিয়ায় প্রবেশের পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই মার্কিন নাগরিককে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে নিখোঁজ হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। এর আগে তাঁকে সবশেষ দেখা গিয়েছিল হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে। মিসৌরি স্টেট হাইওয়ে পেট্রল এবং হাঙ্গেরির কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
এই মার্কিন নাগরিক এমন একসময় উদ্ধার হলেন, যখন সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধারা ঘোষণা দিয়েছেন যে তাঁরা বাশার আল-আসাদের কুখ্যাত কারাগারগুলো বন্ধ করে দেবেন। আর এসব কারাগারে বন্দীদের নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদেরও খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
বিদ্রোহীরা বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক দিন পর গত সোমবার টিমারম্যান বলেন, দুজন ব্যক্তি হাতুড়ি দিয়ে কারাগারের দরজা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, ‘হাতুড়ির আঘাতে কারাগারের দরজা ভেঙে যায় এবং আমি জেগে উঠি।’
টিমারম্যান আরও বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, কারারক্ষীরা তখনো সেখানে ছিলেন। তাই আমি মনে করলাম, যুদ্ধের কৌশল হয়তো আরও সক্রিয় করা হয়েছে। তবে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি। সত্যিকার অর্থে কোনো লড়াই হয়নি।’
৩০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বলেন, সেদিন বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে তিনি কারাগার থেকে বের হন এবং জর্ডানে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর সিরিয়ার কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিকের মরদেহ পাওয়া গেছে। কারাগারটিতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে উদ্ধারকারীরা মরদেহগুলোর সন্ধান পায় বলে জানিয়েছে পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। সংস্থাটি বলছে, নৃশংসভাবে নির্যাতনের পর এই ১৫ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়।
টিমারম্যান আরও বলেন, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর কিছু সময় পর্যন্ত তিনি ভয়ে ছিলেন। এরপর একটা ঘুমানোর জায়গা খুঁজছিলেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে খাবার ও অন্যান্য সহায়তা দেন।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, টিমারম্যানকে দেশে ফিরিয়ে নিতে কাজ করছে ওয়াশিংটন।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর সিরিয়ার কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিকের মরদেহ পাওয়া গেছে। কারাগারটিতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে উদ্ধারকারীরা মরদেহগুলোর সন্ধান পায় বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। সংস্থাটি বলছে, নৃশংসভাবে নির্যাতনের পর এই ১৫ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়।
আসাদের আমলে নিখোঁজ হওয়া প্রিয়জনের খোঁজে সিরিয়ার নাগরিকেরা এখন দেশটির বিভিন্ন কারাগারে ভিড় জমাচ্ছেন।
সেদনায়া কারাগারটি দামেস্কের উত্তরে অবস্থিত। বাশার আল-আসাদ সরকারের নৃশংসতার সাক্ষী হয়ে আছে এই কারাগার। এখানে হাজারো সিরীয় নাগরিককে বন্দী করে রেখেছিল তাঁর সরকার। আসাদের পতনের পর কারাগারটিতে সিরীয় অধিকারকর্মী মাজেন আল হামাদার মরদেহ পাওয়ার কথা জানায় তাঁর পরিবার।