পশ্চিম তীরে চরমপন্থী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে চরমপন্থী ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব বসতি স্থাপনকারীদের ইসরায়েল সরকার অর্থায়ন করে থাকে। পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান সহিংসতার লাগাম টেনে ধরতে ওয়াশিংটনের চলমান প্রচেষ্টা জোরালো করার অংশ এ পদক্ষেপ।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন পদক্ষেপে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাঁর কার্যালয় বলেছে, তারা এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা করার কথা ভাবা হচ্ছে।
ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান ও এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরোপ করা হয়েছে এ নিষেধাজ্ঞা। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জমিজমা দখলের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ভয়ভীতি দেখানোর দায়ে যুক্তরাষ্ট্র ওই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে।
গত জানুয়ারির শেষ দিকে খিরবেত জানুতা গ্রামের আড়াই শ বাসিন্দাকে তাঁদের বাড়িঘর চলে যেতে বাধ্য করেছে হ্যাশমোর ইয়োস। সেই সঙ্গে তাঁরা যাতে ফেরত আসতে না পারেন, সে জন্য গ্রামের চারপাশে বেড়া দেওয়া হয়েছে।ম্যাথু মিলার, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং কোনো মার্কিন নাগরিক ও প্রতিষ্ঠান তাঁদের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবে না।
নিষেধাজ্ঞায় পড়া প্রতিষ্ঠানটি হলো, হ্যাশমোর ইয়োস। প্রতিষ্ঠানটি অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে এমন লোকজনও আছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে আগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র।
চরমপন্থী এই ইসরায়েলিরা পশ্চিম তীরের বিশেষ করে দক্ষিণ হেবরনের পাহাড়ি এলাকায় সক্রিয় আছেন। স্থানীয় বেদুইন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার ঘটনায় বিশেষ নজরে আসেন তাঁরা।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং কোনো মার্কিন নাগরিক ও প্রতিষ্ঠান তাঁদের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবে না।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গত জানুয়ারির শেষ দিকে খিরবেত জানুতা গ্রামের আড়াই শ বাসিন্দাকে তাঁদের বাড়িঘর চলে যেতে বাধ্য করেছে হ্যাশমোর ইয়োস। সেই সঙ্গে তাঁরা যাতে ফেরত আসতে না পারেন, সে জন্য গ্রামের চারপাশে বেড়া দেওয়া হয়েছে।’
হ্যাশমোর ইয়োস কাগজে–কলমে একটি বেসরকারি সংগঠন হিসেবে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জোট সরকারের কাছ থেকে অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা পেয়ে আসছে তারা।
বুধবারের এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিটি হলেন আইজ্যাক লেভি ফিল্যান্ট। ‘আইজার’ অবৈধ বসতির নিরাপত্তা সমন্বয়ক তিনি। বসতিটি নাবলুসের দক্ষিণে অবস্থিত। অবৈধ বসতিগুলোর অন্যান্য নিরাপত্তা সমন্বয়কের মতো তিনিও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বেতন গ্রহণ করে থাকেন।
ফিল্যান্টের বিষয়ে ম্যাথু মিলার বলেন, তাঁর ভূমিকা নিরাপত্তা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্যের মতো হলেও কর্তৃত্ববহির্ভূতভাবে অন্যায় কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন তিনি।
ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকারের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে নিষেধাজ্ঞার এ পদক্ষেপকে দেখা হচ্ছে।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) অভিযান শুরু করার কয়েক ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্র চরমপন্থী বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ওই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করল।
এর আগে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর পশ্চিম তীরের শান্তি, নিরাপত্তা বা স্থিতিশীলতা নষ্টে জড়িত বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ওই ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর পশ্চিম তীরের শান্তি, নিরাপত্তা বা স্থিতিশীলতা নষ্টে জড়িত বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ওই ঘোষণা দেন।
ওই সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছিল, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে আসছেন। এতে ভূমি হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। তবে এসব বন্ধে ইসরায়েলি প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
গাজার পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা। পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের হামলার ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি চার ইসরায়েলির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি অনুমোদন দিয়ে এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি বলেন, পশ্চিম তীরে সহিংসতা ‘অসহনীয় পর্যায়ে’ পৌঁছেছে।