যমজ সন্তানের জন্মসনদ হাতে নিতেই ফিলিস্তিনি বাবা জানলেন সন্তানেরা বেঁচে নেই
মা–বাবার কোল আলো করে এসেছে নতুন শিশু। তা–ও যমজ। একটি ছেলে, একটি মেয়ে। বয়স যখন মাত্র চার দিন, বাবা যান স্থানীয় সরকারি দপ্তরে সন্তানদের জন্মসনদ নিতে। সনদ হাতেও নেন তিনি। এরই মাঝে খবর আসে, বিমান হামলায় নিহত হয়েছে দুই শিশুসন্তানই।
এ ঘটনা ঘটেছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলীয় দেইর আল বালাহ এলাকায়, ইসরায়েলি বিমান হামলায়। ছেলে শিশুটির নাম আসের। মেয়েটির আয়সেল। বাবার নাম মোহাম্মদ আবু আল–কুমসান।
ইসরায়েলি হামলায় শুধু দুই সন্তানই নয়, স্ত্রী ও শাশুড়িকেও হারিয়েছেন আবু আল–কুমসান।
বিবিসি জানিয়েছে, হামলার সময় আবু আল–কুমসান সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানদের জন্মসনদ সংগ্রহ করতে স্থানীয় সরকারি দপ্তরে গিয়েছিলেন। তখন প্রতিবেশীরা ফোন করে জানান, বাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে।
আবু আল–কুমসান বলেন, ‘আমি আসলে জানি না, কী ঘটেছিল। শুধু এটাই বলতে পারি, একটি গোলা বাড়িতে আঘাত হেনেছিল। যমজ সন্তান জন্ম নেওয়ার আনন্দটুকুও উদ্যাপন করার সময় পাইনি আমরা।’
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১১৫টি শিশু জন্মের পরপরই নিহত হয়েছে।
যুদ্ধের শুরুর দিকের সপ্তাহগুলোতে গাজা নগরী খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এর ফলে পরিবারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে চলে আসে বলে জানায় সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।
যমজ দুই শিশু নিহতের বিষয়ে বিবিসির পক্ষ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছে। এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলি বাহিনী বরাবরই বলে আসছে, গাজায় বেসামরিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টা করে তারা। জনবহুল আবাসিক এলাকাগুলোয় হামাসের কর্মকাণ্ড এসব মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলছে। কেননা, এসব এলাকায় হামাসের সদস্যরা আশ্রয় নিয়ে থাকেন।
তবে কোনো নির্দিষ্ট হামলার ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রতিক্রিয়া জানাতে সচরাচর দেখা যায় না।
গত শনিবার গাজা নগরীর একটি বিদ্যালয়ে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বিদ্যালয় ভবনটিতে গাজা উপত্যকার উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। হামলায় নিহত হন ৭০ জনের বেশি মানুষ। বিবিসিকে এ তথ্য জানান স্থানীয় একটি হাসপাতালের পরিচালক।
তবে ইসরায়েলি বাহিনীর একজন মুখপাত্র দাবি করেন, ওই বিদ্যালয় ভবন হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সদস্যরা সক্রিয় সামরিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। তবে হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।