গোলানে হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ ইসরায়েলের, সতর্ক করল ইরান
লেবাননে ইসরায়েলনিয়ন্ত্রিত গোলান মালভূমিতে রকেট হামলার ঘটনায় ‘শত্রুপক্ষকে’ ব্যাপকভাবে আক্রমণের অঙ্গীকার করেছে ইসরায়েল। গতকাল রোববার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছে দেশটির নিরাপত্তাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা।
তবে এ ব্যাপারে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে ইরান। দেশটি বলেছে, লেবাননে নতুন করে সামরিক অভিযান চালানো হলে তা ‘নজিরবিহীন পরিণাম’ বয়ে আনবে।
ইসরায়েলের দাবি, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ গোলান মালভূমিতে ফালাক-১ নামের ইরানি রকেট দিয়ে হামলা চালিয়েছে। ইরানসমর্থিত এ গোষ্ঠী নিয়মিতই ইসরায়েলি সেনা স্থাপনায় হামলা চালিয়ে থাকে।
তবে হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, গোলানে হামলার ঘটনায় তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে গোষ্ঠীটি বলেছে, তারা গত শনিবার গোলানে ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে এ ধরনের একটি রকেট হামলা চালিয়েছিল।
ইসরায়েলনিয়ন্ত্রিত গোলান মালভূমির মাজদাল শামস এলাকায় শনিবার একটি ফুটবল মাঠে রকেট হামলায় ১২ জন নিহত হন। এ এলাকার মানুষ আরবিভাষী দ্রুজ। হামলার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুত দেশে ফিরেছেন। তাঁর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু দেশে ফেরার পরপরই নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
নেতানিয়াহু বলেন, হামলার জন্য হিজবুল্লাহকে চড়া মূল্য দিতে হবে। এমন মূল্য, যা আগে কখনো তাদের চুকাতে হয়নি।
বৈঠকের পর নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়, কী উপায়ে এবং কখন সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে মন্ত্রিসভার সদস্যরা এখতিয়ার দিয়েছেন।
তবে এ ব্যাপারে আর বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।
এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট হামলাস্থল পরিদর্শন করেন। শত্রুপক্ষকে কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, হিজবুল্লাহ সব সীমা অতিক্রম করেছে।
হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিশোধের আশঙ্কায় সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা এবং লেবাননের পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি অবস্থান থেকে সরে গেছে গোষ্ঠীটি।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গতকাল বলেছে, তারা দক্ষিণাঞ্চলীয় লেবানন ও লেবাননের ভূখণ্ডের একেবারের ভেতরের দিকে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে।
লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র এএফপিকে বলেছে, লেবাননের পূর্বাঞ্চলীয় তারাইয়া গ্রামে ইসরায়েলি ড্রোন থেকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কোনো প্রাণহানি হয়নি।
এদিকে প্রতিশোধমূলক হামলার ব্যাপারে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, জায়নবাদী সরকারের যেকোনো ধরনের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের কারণে অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা, অনিরাপত্তা ও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাজদাল শামসের এ ঘটনাকে বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছে। তাদের দাবি, হিজবুল্লাহ ইচ্ছা করে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে।
১৯৬৭ সালে ইসরায়েল সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান মালভূমির দখল নেওয়ার পর থেকে দ্রুজ শহরের অনেক বাসিন্দা ইসরায়েলের জাতীয়তা গ্রহণ করেননি।
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েল মিথ্যা অভিযোগ তুলছে উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে সিরিয়া।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি সব পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ মাত্রায় সংযত’ থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।