জাতিসংঘের কালোতালিকায় ইসরায়েলি বাহিনী, রাষ্ট্রদূতের কর্মকাণ্ডে ডুজারিকের বিস্ময়
সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের ক্ষতি করার দায়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে ‘কালোতালিকাভুক্ত’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। যুদ্ধনীতি ভেঙে যেসব দেশ শিশুদের ওপর চড়াও হয়েছে, সেসব দেশকে নিয়ে এ তালিকা করেছে সংস্থাটি। নিরাপত্তা পরিষদের সভায় উত্থাপনের পর সপ্তাহখানেক বাদে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তাঁদের সেনাবাহিনীকে কালোতালিকাভুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে এ–সংক্রান্ত এক ফোনকলের ভিডিও এক্সে তিনি প্রকাশ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। গিলাদকে জাতিসংঘের ওই সিদ্ধান্তের কথা জানাতে ফোন করেছিলেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা। এ সময় গিলাদ ফোনকলে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এর অংশবিশেষ এক্সে পোস্ট করেন।
ভিডিও কলে গিলাদকে দাবি করতে শোনা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী ইসরায়েলের। এ সময় তিনি আন্তোনিও গুতেরেসকে কালোতালিকাভুক্ত একমাত্র মহাসচিব হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁর দাবি, গুতেরেস সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করেন এবং তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঘৃণা উসকে দেন। তিনি জাতিসংঘের এমন সিদ্ধান্তকে আপত্তিজনক ও ভুল পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন।
ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের এমন আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্টিফেন ডুজারিক। তিনি বলেন, তাঁর ২৪ বছরের চাকরিজীবনে কোনো কূটনীতিককে এমন অপেশাদারি আচরণ করতে দেখেননি।
সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের প্রতি আইন লঙ্ঘনকারী দেশগুলোর তালিকাসংবলিত একটি প্রতিবেদন ১৪ জুন নিরাপত্তা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে। এর কয়েক দিন পর এ সিদ্ধান্তের কথা জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে। তালিকায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর নামও রয়েছে।
ডুজারিক সাংবাদিকদের বলেন, সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের প্রতি আইন লঙ্ঘনকারী দেশগুলোর তালিকাসংবলিত একটি প্রতিবেদন ১৪ জুন নিরাপত্তা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে। এর কয়েক দিন পর এ সিদ্ধান্তের কথা জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে। তালিকায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর নামও রয়েছে।
ডুজারিক বলেন, এ তথ্য জানাতেই কাজের অংশ হিসেবে তাঁদের একজন কর্মকর্তা গিলাদকে ফোন করেন। অথচ গিলাদ ওই ফোনকলের কথোপকথনের ভিডিও করেন এবং অংশবিশেষ এক্সে প্রকাশ করেন।
সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন পক্ষ
জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। এ কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রিয়াদ মালিকি এক বিবৃতিতে বলেছেন, অনেক বিলম্বে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গাজায় কোন ধরনের বিপর্যয় চলছে, তা বিশ্ব এখন খালি চোখেই দেখছে। সেখানে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
ভিডিও কলে গিলাদকে দাবি করতে শোনা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী ইসরায়েলের। এ সময় তিনি আন্তোনিও গুতেরেসকে কালোতালিকাভুক্ত একমাত্র মহাসচিব হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁর দাবি, গুতেরেস সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করেন এবং তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঘৃণা উসকে দেন। তিনি জাতিসংঘের এমন সিদ্ধান্তকে আপত্তিজনক ও ভুল পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন।
মালিকি আরও বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে কালোতালিকাভুক্ত না করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের সামনে আর কোনো অজুহাতের পথ খোলা ছিল না।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এ উপত্যকায় গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৭০০ জনের বেশি ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশুই ১৫ হাজার ৫৭১টি।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় খাদ্য, পানি, ওষুধ, এমনকি অতি জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহে বাধা দিয়ে আসছে। এতে সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গাজার অনেক অংশে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের প্রতি ১০ শিশুর ৯টিই তীব্র খাবারসংকটে ভুগছে।
ইসরায়েলকে কালোতালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটির মানবিক নীতি ও পরামর্শবিষয়ক বিভাগের প্রধান আলেকজান্দ্রা সায়েহ বলেন, ‘এটা সত্যিকারে লজ্জাজনক ঘটনা যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন পর্যন্ত গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারল না।’
আলেকজান্দ্রা সায়েহ বলেন, জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত ইসরায়েলকে জবাবদিহির মুখে দাঁড় করাতে পথ তৈরি করবে। তবে একই ধরনের অপরাধে (ক্ষতি থেকে শিশুদের রক্ষা করতে না পারা) ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জ-দিন আল-কাসাম ব্রিগেড ও আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদকেও কালোতালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।