ইসরায়েলি বোমায় কাঁপছে লেবানন, ঝুঁকিতে মধ্যপ্রাচ্য

  • হিজবুল্লাহর কমপক্ষে ১ হাজার ৬০০টি অবস্থানে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।

  • ইসরায়েলের ব্যাপারে ইরান চুপ থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।

দক্ষিণ লেবাননের বালবেক শহরে ইসরায়েলের হামলার পর ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়ছবি: এএফপি

যুদ্ধকবলিত মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর এবার লেবাননে নির্বিচার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত সোমবার থেকে ইসরায়েলের হামলায় ৫৫৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সোমবার এক দিনেই নিহত হয়েছেন ৪৯২ জন।

সম্প্রতি গাজা থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলে নজর ফেরানোর কথা জানিয়েছিল ইসরায়েল সরকার। এরই মধ্যে যোগাযোগযন্ত্র পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর ভিত নাড়িয়ে দেয় ইসরায়েল। ওই ঘটনাকে হিজবুল্লাহর ওপর বড় ধরনের হামলার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছিল।

এরই মধ্যে গত সোমবার থেকে গোটা লেবাননজুড়ে নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সবচেয়ে বেশি হামলা হয় হিজবুল্লাহ অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলে। হামলার আগে হিজবুল্লাহর অবস্থান থেকে দূরে সরে যেতে বাসিন্দাদের বার্তা দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে, সোমবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহত মানুষের মধ্যে ৫০ শিশু ও ৯৪ নারী রয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১ হাজার ৮৩৫ জন।

‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন’

লেবাননে গত সোমবার চালানো ইসরায়েলের নির্বিচার হামলাকে কয়েক বছরের সহিংসতার মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর। একই সঙ্গে বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন একবারেই স্পষ্ট। একটি সশস্ত্র সংঘাতে সব পক্ষকে অবশ্যই সব সময় বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধা এবং বেসামরিক স্থাপনা ও সামরিক স্থাপনাকে পৃথক করতে হবে।’

আরও পড়ুন

পালাচ্ছেন বাসিন্দারা

এদিকে নতুন সতর্কবার্তায় হিজবুল্লাহর অবস্থান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে সরে যেতে লেবাননের বাসিন্দাদের নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর আগে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার মুখে দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের রাজধানী বৈরুতের সরে যেতে দেখা যায়। এ সময় গাড়ির চাপে সড়কে দীর্ঘ যানজটের তৈরি হয়।

জেনেভায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র ম্যাথু সল্টমার্শ বলেন, লেবাননে ইসরায়েলের হামলার মধ্যে বেসামরিক নাগরিক নিহতের এই সংখ্যা অগ্রহণযোগ্য। তিনি আরও বলেন, গতকাল (সোমবার) এবং রাতে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এই সংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ে থাকা লেবাননের মন্ত্রী নাসের ইয়াসিন বলেন, বাস্তুচ্যুত লোকজনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনায় ৮৯টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

অস্থিরতার শঙ্কা গোটা মধ্যপ্রাচ্যে

গত সোমবার থেকে হিজবুল্লাহর কমপক্ষে ১ হাজার ৬০০টি অবস্থানে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েল। হামলা থেকে বাদ যায়নি রাজধানী বৈরুতও। এর জবাবে ইসরায়েলে দুই শতাধিক রকেট ছোড়ার দাবি করেছে হিজবুল্লাহ। পাল্টাপাল্টি এ হামলা ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি।

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর পাল্টাপাল্টি হামলার জের ধরে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের এই অপরাধের জবাবে ইরান নিশ্চুপ থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচাই।

রাশিয়া সতর্ক করে বলেছে, লেবাননে ইসরায়েলের হামলা মধ্যপ্রাচ্যকে পুরোপুরি অস্থিতিশীল করার এবং এ সংঘাতকে বিস্তৃত করার আশঙ্কা তৈরি করেছে। এ হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ক্রেমলিন।

লেবাননে হামলার নিন্দা জানিয়ে তুরস্ক বলেছে, গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াসে লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদের সমর্থন দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে আঙ্কারা।

আরও পড়ুন