ইসরায়েলের পাঁচটি পদাতিক বাহিনীর একটি গোলানি ব্রিগেড। দেশের ঠিক মধ্যাঞ্চলে এই অভিজাত গোলানি ব্রিগেডের ঘাঁটিতে লেবাননের হিজবুল্লাহর প্রাণঘাতী ড্রোন হামলা বিস্মিত করেছে দেশটির সরকার ও জনগণকে। গত রোববারের ওই হামলায় চার সেনা নিহত হন। আহত হন ৬৭ জন।
এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী বলেছে, ইসরায়েলের হাইফার দক্ষিণে বেনিয়ামিনা এলাকায় গোলানি ব্রিগেডের ক্যাম্পে ড্রোন হামলা চালিয়েছে তারা। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, হামলায় চার সেনা নিহত হয়েছেন। এটি ছিল গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইসরায়েলি কোনো ঘাঁটিতে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল দানিয়েল হাগারি বলেছেন, তাঁরা এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবেন। ঘটনাটি তদন্ত করবেন।
হামলার বিষয়ে হিজবুল্লাহ বলেছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ব্যস্ত রাখতে হাইফার উত্তরাঞ্চলে নাহারিয়া ও আকরে এলাকায় বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তারা। সেই ফাঁকে এই ড্রোন হামলা চালানো হয়। একে ‘মিশ্র অভিযান’ আখ্যা দিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
বেনিয়ামিনা এলাকাটি ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার আর ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ শহর হাইফা থেকে ৩৩ কিলোমিটার দক্ষিণে। ঠিক সেখানে হিজবুল্লাহর এ ধরনের হামলায় ইসরায়েলি কর্মকর্তারা একেবারেই হতবাক।
হামলার পর গোলানি ব্রিগেডের ওই ঘাঁটি পরিদর্শনে যান ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত করব। বিষয়টি বিশদভাবে খতিয়ে দেখা হবে। এর থেকে পাওয়া শিক্ষা দ্রুত এবং পেশাদারত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হবে।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘ড্রোন হুমকি মোকাবিলার একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমরা বড় ধরনের সমন্বিত প্রচেষ্টা নিতে যাচ্ছি।’
এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননে বড় ধরনের হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজার একটি বিদ্যালয় ও একটি হাসপাতালের সামনে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের ওপর ইসরায়েলের হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৬২ জন নিহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার জানিয়েছে। অন্যদিকে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গত রোববার দেশটিতে ৫২ জন নিহত হয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে বড় পরিসরে আঞ্চলিক সংঘাত এড়াতে লেবানন ও গাজায় জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি।
দেশ ছাড়ছেন ইসরায়েলিরা
জেরুজালেম পোস্ট–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েল ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। ইসরায়েলিরা এত বেশি সংখ্যায় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন যে ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এমন পরিস্থিতির মুখে আগে কখনো পড়েনি দেশটি।
বিদেশে যাওয়ার সময় লোকজন তাঁদের অর্থসম্পদও নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া অনেক শিক্ষিত ও দক্ষ লোক ইসরায়েল ছেড়ে যাচ্ছেন। এভাবে লোকজন বিদেশে পাড়ি জমাতে থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ৭ মাসে ৪০ হাজার ৬০০ ইসরায়েলি দেশ ছেড়েছেন। ২০২৩ সালে যত ইসরায়েলি দেশ ছেড়েছিলেন, এ বছর তার চেয়ে বেশি মানুষ দেশ ছেড়েছেন।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইসরায়েল ছেড়েছিলেন ৫৫ হাজার ৪০০ মানুষ। আগের এক দশকের গড়ের তুলনায় যা ছিল সর্বোচ্চ। এর আগে ইসরায়েল থেকে প্রতিবছর গড়ে ৩৭ হাজার ১০০ ব্যক্তি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। একই সময় ২৭ হাজার ৮০০ ব্যক্তি সেখানে ফিরেছেন, যা এক দশকের গড় ২৩ হাজার ৮০০ জনের তুলনায় বেশি।