ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াই হিজবুল্লাহর

লেবানন থেকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ছোড়া রকেটের হামলায় আগুন জ্বলছে।লেবানন সীমান্তবর্তী ইসরায়েলে কিরিয়াত শমোনা শহর থেকে ছবিটি তোলা। ৫ অক্টোবরছবি: এএফপি

লেবাননে হামলা আরও বিস্তৃত করেছে ইসরায়েল। বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ লড়াই চলছে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের।

লেবাননে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চালানো ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১২ লাখ মানুষ। প্রায় দুই লাখ মানুষ সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় গত প্রায় এক বছরে দেশটিতে দুই হাজারের বেশি প্রাণহানি হয়েছে।

লেবানেন ইসরায়েলের বিমান হামলায় ২৭ সেপ্টেম্বর নিহত হন লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। এর দুই দিন পর দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে লেবাননে স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর মধ্য দিয়ে এক বছর ধরে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা আন্তসীমান্ত সংঘাত সর্বাত্মক একটি যুদ্ধের রূপ ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, ২০০৬ সালে ইসরায়েল–হিজবুল্লাহর লড়াইয়ের সময়ও এত বিস্তৃত হামলা হয়নি লেবননে। এবার এমন কিছু এলাকায় ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে, যেখানে ২০০৬ সালের বড় সংঘাতের সময়ও হামলা হয়নি।

মুখোমুখি লড়াই

হিজবুল্লাহ গতকাল শনিবার জানায়, লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে তাদের যোদ্ধাদের লড়াই চলছে। অনেক স্থানে ইসরায়েলি সেনাদের প্রতিহত করা হয়েছে। সীমান্তের অদূরে যোদ্ধারা ইসরায়েলের একটি ট্যাংকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি গতকাল ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফার রামাত ডেভিড বিমানঘাঁটিতে রকেট হামলা চালানো হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গতকাল এক বিবৃতিতে জানায়, দক্ষিণ লেবাননে তাদের স্থল হামলা অব্যাহত রয়েছে। লড়াইয়ে এক সপ্তাহে আড়াই শতাধিক হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

গতকাল হিজবুল্লাহর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ধ্বংস করেছে বলে দাবি ইসরায়েলের।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, এসব স্থাপনায় অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক মজুত করে রেখেছিল হিজবুল্লাহ। সীমান্তের কাছে হিজবুল্লাহর একটি সুড়ঙ্গ ধ্বংসের দাবিও করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, গতকাল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে একটি মসজিদে বিমান হামলা চালিয়েছে তারা। ইসরায়েলের দাবি, ওই মসজিদের ভেতর হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টার ছিল। ইসরায়েলি সেনা ও ইসরায়েলের ওপর হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হতো সেখান থেকে।

এ ছাড়া বৈরুত ও আশপাশের এলাকায় বিমান থেকে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। বৈরুতের দক্ষিণের দাহিয়েহ অঞ্চলে গতকাল সন্ধ্যায় ইসরায়েলি বোমা হামলার খবর পাওয়া যায়। একই সময় বৈরুতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরেও বিমান হামলা হয়েছে। গতকাল লেবাননের পূর্বাঞ্চলীয় শহর জাওতারে বালবেকেও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।

লেবাননে হামাস নেতা নিহত

লেবাননের উত্তরের ত্রিপোলি অঞ্চলে বেদ্দাউই শরণার্থীশিবিরে গতকাল ইসরায়েলের বিমান হামলায় ফিলিস্তিনের গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের এক শীর্ষ নেতা তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়েসহ নিহত হয়েছেন। সাইদ আতাল্লাহ আলী নামের ওই হামাস নেতা সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন বলে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

বড় পরিসরে হামলার প্রস্তুতি

ইসরায়েলের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে গতকাল আল–জাজিরা জানায়, একযোগে ইরান, লেবানন ও গাজায় বড় পরিসরে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইসরায়েলের মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোও অংশ নিতে পারে। এ হামলার বিষয়ে আলোচনা করতে মধ্যপ্রাচ্যে সফরে যাচ্ছেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিলা। গতকালই তাঁর ইসরায়েলে পৌঁছানোর কথা।

ইয়েমেনে বিমান হামলা যুক্তরাষ্ট্রের

ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে একযোগে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন সামরিক বাহিনী (সেন্টকম) গত শুক্রবার বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

সেন্টকমের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার ইয়েমেনে হুতি নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন এলাকায় ১৫টি হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

হুতি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম আল মাশিরাহ টিভি নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানী সানায় চারটি ও বন্দরনগর‌ী হোদেইদাহতে সাতটি বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোদেইদাহতে হামলাগুলো হয়েছে বিমাবন্দরে ও কাথেইব এলাকায়। কাথেইবে হুতিদের একটি সামরিক ঘাঁটি আছে।

সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন দুই লাখ মানুষ

ইসরায়েলের হামলার মুখে লেবানন থেকে দুই লাখের বেশি মানুষ প্রতিবেশী সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন।

গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ইসরায়েলের বিমান হামলার মুখে লেবানন থেকে দুই লাখের বেশি মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে লেবাননের নাগরিক যেমন আছেন, তেমনি আছেন সংঘাতের মুখে সিরিয়া থেকে পালিয়ে লেবাননে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরাও।

এদিকে লেবানননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় দুই হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে ১২৭ শিশু ও ২৬১ জন নারী।