রাফায় জোর হামলা ইসরায়েলের

ইসরায়েলের বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়েছে বাড়ি। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিজের জিনিসপত্র হাতড়ে বেড়াচ্ছিলেন এক নারী। গতকাল দক্ষিণ গাজার রাফায়ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজার একেবারে দক্ষিণে রাফা এলাকায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল শুক্রবার রাতে চালানো এ হামলার এক দিন আগেই এ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এমন সময় রাফায় হামলা চালানো হলো, যখন উপত্যকাটিতে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যস্থতাকারীরা।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার মুখে গাজার বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন। শুক্রবার জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই এলাকায় এখন উপত্যকাটির ২৩ লাখ বাসিন্দার অর্ধেকের বেশি বসবাস করছেন। এর মধ্যে গত কয়েক দিনে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস থেকে নৃশংস হামলার জেরে পালানো লোকজনও রয়েছেন।

শুক্রবার মধ্যরাতের পর একের পর এক শক্তিশালী বোমার আঘাতে কেঁপে ওঠে রাফা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ শনিবার জানিয়েছে, এর মধ্যে দুটি হামলায় ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর আগের ২৪ ঘণ্টায় পুরো উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন ১০৭ জন।

রাফায় আশ্রয় নেওয়া লাখো মানুষের মধ্যে একজন আবদুল করিম মিসবাহ। তিনি প্রথমে উত্তর গাজা জাবালিয়া শরণার্থীশিবির থেকে খান ইউনিসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখান থেকে পরে রাফায় পালিয়ে এসেছেন। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত মিসবাহ বলেন, ‘এখানে আমার চার শিশুসন্তান ঠান্ডায় কাঁপছে। তারা সব সময়ই অসুস্থ থাকছে।’

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। সেখান থেকে জিম্মি করা হয় প্রায় ২৪০ জনকে। সেদিন থেকেই গাজায় চলছে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৭ হাজার ২৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬৬ হাজার ৪৫২ জন।

আরও পড়ুন

কূটনৈতিক তৎপরতা

গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছিলেন, খান ইউনিসে হামাসকে সফলভাবে নির্মূলের পর এবার আরও দক্ষিণে রাফায় অভিযান চালাবেন ইসরায়েলি সেনারা। এরপরই শুক্রবার রাতে সেখানে তীব্র হামলা হলো। এসব হামলায় যখন ফিলিস্তিনিদের লাশের সারি বেড়েই চলেছে, তখন অপর দিকে চলছে যুদ্ধবিরতির তৎপরতা।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামীকাল রোববার মধ্যপ্রাচ্যে যাবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তির যে তৎপরতা চলছে, তা আরও জোরদার করতেই তাঁর এ সফর। সফরের অংশ হিসেবে তিনি কাতার, মিসর, ইসরায়েল, সৌদি আরব ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ভ্রমণ করবেন।

আরও পড়ুন

সংঘাত শুরুর পর এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্য সফর করতে যাচ্ছেন। নতুন করে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো খবরের আশা রয়েছে’-কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারির এমন মন্তব্যের পর নতুন করে এ সফর করতে যাচ্ছেন ব্লিঙ্কেন। মাজেদ আল-আনসারির ভাষ্যমতে, সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রস্তাবিত একটি চুক্তিতে সায় দিয়েছে ইসরায়েল। হামাসের কাছ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।

প্রস্তাবিত চুক্তিটি নিয়ে হামাস জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী তাদের যে পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে, তাতে গাজা ছয় সপ্তাহ যুদ্ধবিরতি এবং আরও ত্রাণ সরবরাহের বিনিময়ে তাদের হাতে বন্দী নির্দিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে। তবে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভবিষ্যতে গাজায় কোনো যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে অবশ্যই উপত্যকাটি থেকে সব ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।

আরও পড়ুন