জিম্মি হত্যা করে চাপে ইসরায়েল

জিম্মি হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার রাতেই তেলআবিবে বড় ধরনের বিক্ষোভ শুরু হয়ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের হাতে থাকা তিনজন জিম্মিকে ‘ভুল করে’ নিজেরাই হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বিষয়টি স্বীকার করেছে তারা। এ ঘটনায় দেশটিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় জিম্মি মুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে ইসরায়েল।

নিহত তিন ইসরায়েলি জিম্মি হলেন ইয়োতাম হাইম (২৮), সামের তালালকা (২২) ও অ্যালন শামরিজ (২৬)। তাঁদের মধ্যে দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে শেজাইয়া এলাকায় শুক্রবার অভিযানের সময় তাদের গুলিতে ওই তিনজন নিহত হন।

এ ঘটনাকে ‘অবর্ণনীয় দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, ‘এটা দুঃখজনক ভুল।’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা। মাঝে যুদ্ধবিরতি চলার সময় বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এখনো হামাসের কাছে ১৪০ জনের মতো জিম্মি থাকতে পারে বলে ইসরায়েল জানিয়েছে।

আরও পড়ুন

হাতে ছিল সাদা পতাকা, তারপরও গুলি

শনিবার ইসরায়েলের একজন সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, ভুল করে তিন জিম্মিকে গুলি করে হত্যার সময় তাঁদের হাতে সাদা পতাকা ছিল। প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এই কর্মকর্তা বলেন, একজন সেনা শুক্রবার শেজাইয়া এলাকায় স্বল্প দূরত্ব থেকে ওই জিম্মিদের বেরিয়ে আসতে দেখেন। তাঁদের হাতে থাকা একটি লাঠিতে সাদা কাপড় বাঁধা ছিল।

সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, সংশ্লিষ্ট একজন সেনা তাঁদের (জিম্মি) হুমকি মনে করেন ও গুলি চালান। ওই সেনাসদস্য তাঁদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিলে অন্য সেনারা তখন গুলি চালান। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক দুই জিম্মি নিহত হন।

তৃতীয়জন আহত হন। তাঁকে কাছাকাছি একটি ভবনে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ সময় হিব্রু ভাষায় সাহায্য চান তিনি। পরে তিনিও মারা যান।

বড় ধরনের বিক্ষোভ

জিম্মি হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার রাতেই তেলআবিবে বড় ধরনের বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় অনেকে নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে বক্তব্য দেন।

জিম্মিদের মুক্ত করতে হামাসের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগে থেকেই ইসরায়েলের ভেতর থেকে চাপ ছিল দেশটির সরকারের ওপর। তিন জিম্মি হত্যার ঘটনার পর এ চাপ আরও বেড়েছে।

আরও পড়ুন

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার নরওয়ের রাজধানী অসলোতে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ডেভিড বার্নিয়ার বৈঠক করার কথা। বৈঠকে জিম্মি মুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর কথা ছিল।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে জিম্মি ও বন্দী বিনিময়ে মধ্যস্থতা করে আসছে কাতার ও মিসর। নতুন করে আলোচনা শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কাতার।

এদিকে গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলা অব্যাহত রয়েছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও রাফাহ এলাকায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তিন দিন ধরে গাজায় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা অচল রয়েছে। এতে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি হতাহতের হালনাগাদ তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন