সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বেড়ে দ্বিগুণ

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
ছবি: রয়টার্স

সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমান ও তাঁর ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের শাসনামলে দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুটি মানবাধিকার সংস্থা এ হিসাব দিয়েছে। একই সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের মতো ঘটনার বিস্তারিত উঠে এসেছে সংস্থা দুটির প্রতিবেদনে।

রিপ্রাইভ এবং দ্য ইউরোপিয়ান সৌদি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে সৌদি আরবে ফাঁসি কার্যকর করার গড় হার ছিল ৭০ দশমিক ৮। তবে ২০১৫ সালে সালমান সৌদি আরবের বাদশাহ হওয়ার পর ওই বছর এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ১২৯ দশমিক ৫।

সংস্থার দুটির হিসাবে, সালমান বাদশাহ হওয়ার পর থেকে সৌদি আরবে এক হাজারের বেশি মানুষের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। সৌদি আরবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে ফাঁসি কার্যকরের ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখা এবং আসামিদের আইনজীবী, পরিবারের সদস্য ও অধিকারকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এ হিসাব তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির বর্তমান নেতৃত্বে সহস্রাধিক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। শুধু গত বছরেই ১৪৭ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের সরকারি ঘোষণার বরাতে এএফপিও এ হিসাব নিশ্চিত করেছে।

বিশ্বে ফাঁসি কার্যকরের দিক থেকে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর একটি সৌদি আরব। গত বছরের মার্চে এক দিনে ৮১ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছিল দেশটির কর্তৃপক্ষ। এসব মানুষের নামে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরে অনেক সংস্কার হলেও বিরোধী মত দমনে দমনপীড়ন অব্যাহত রয়েছে সৌদি আরবে।

রিপ্রাইভের পরিচালক মায়া ফোয়া বলেন, এই প্রতিবেদনের প্রতিটি তথ্য-উপাত্ত দেখাচ্ছে যে মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। শিশু, বিরোধী মতের মানুষ, গৃহকর্মী নারী, অজান্তে মাদক নেওয়া মানুষ—এমনকি নিষিদ্ধ বই রাখা অথবা বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার মতো দায় তুলেও ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী সৌদির সাম্প্রতিক ইতিহাসের যে ছয়টি বছরে সবচেয়ে বেশি ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, সে সময় নেতৃত্বে ছিলেন বাদশাহ সালমান ও তাঁর ছেলে।

২০১৩ সাল থেকে অন্তত ১৫ জনকে এমন সব অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে, যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে এসব অপরাধ করেছিলেন। এ ছাড়া ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২৩ বিদেশি নাগরিকসহ ৩১ জন নারীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর মধ্যে ১৩ জন গৃহকর্মীর কাজ করছিলেন দেশটিতে।

৫৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে পদ্ধতিগত নির্যাতন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া না মানা, মনগড়া বিচার এবং নারী ও শিশু অপরাধীদের নির্যাতন করার অভিযোগও উঠেছে।