ইরানের সামরিক ঘাঁটিতে ইসরায়েলি হামলার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আত্মরক্ষার অধিকারের অংশ হিসেবে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। প্রায় একই ধরনের মত তুলে ধরেছে যুক্তরাজ্য। তবে হামলার নিন্দা জানিয়ে একে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছে সৌদি আরব। হামলার সমালোচনা করেছে ইরাক। আর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও হুমকির মুখে ফেলেছে।
ইরানের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আজ শনিবার ভোরে হামলা চালায় ইসরায়েল। কয়েক ঘণ্টা ধরে চালানো এ হামলায় রাজধানী তেহরানসহ প্রায় ২০টি স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র
আত্মরক্ষার অধিকার চর্চার অংশ হিসেবে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়েছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল মূলত সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। অথচ ইরান ইসরায়েলের সবচেয়ে জনবহুল শহর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল।
ইসরায়েলের হামলার পর মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র শন সাভেট সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
ইসরায়েলের ওপর হামলা বন্ধ করতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাভেট বলেন, উত্তেজনা আর না বাড়লে পাল্টাপাল্টি হামলার এ চক্র থামতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট্রিক রাইডার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
রাশিয়া
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা বৃদ্ধি নিয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। একই সঙ্গে সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সৌদি আরব
ইরানে ইসরায়েলের হামলাকে ‘সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম বজায় রাখা এবং উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতি হতে দেখা গেছে। দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। ২০২৩ সালে চীনে এক চুক্তির মধ্য দিয়ে সৌদি আরব ও ইরান পরস্পরের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নতুন করে দূতাবাস চালুর ব্যাপারে সম্মত হয়।
জার্মানি
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, হামলায় ইসরায়েল ‘বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে’ চেষ্টা করেছে। দেশটি ইরানের আগের হামলার জবাব দিয়েছে, তার মানে এই উত্তেজনা আর না বাড়ানোর সুযোগ আছে। একই সঙ্গে তিনি ইরানকে উত্তেজনা না বাড়াতে সতর্ক করে দেন।
ইরাক
ইরানে ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইরাক। এতে ইসরায়েলের সমালোচনা করে বলা হয়, দেশটি আঞ্চলিকভাবে আগ্রাসী নীতি চালিয়ে যাচ্ছে এবং সংঘাতের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
গাজা উপত্যকা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতির জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে ইরাক।
হামাস
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা এ হামলাকে ইরানের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও হুমকির মুখে ফেলল।
যুক্তরাজ্য
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় ইরানের পাল্টা জবাব দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি সব পক্ষকে সংযত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
সামোয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইরানের আগ্রাসন থেকে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার অধিকার ইসরায়েলের আছে। একই রকমভাবে আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের নতুন করে আঞ্চলিক উত্তেজনা এড়ানো প্রয়োজন। সংযম দেখানোর জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ইরানের পাল্টা জবাব দেওয়া উচিত হবে না।’
পাকিস্তান
ইরানে ইসরায়েলের হামলাকে জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এসব হামলা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথ নষ্ট করবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতও ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। অব্যাহত এ উত্তেজনা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর এর প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে দেশটি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিবৃতিতে বলা হয়, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে সংযম চর্চার ওপর জোর দিয়েছে।
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানের তালেবান সরকার ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে এ হামলাকে এ অঞ্চলে চলমান সহিংসতাকে আরও ‘তীব্র’ করে তোলার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছে।
মালয়েশিয়া
ইসরায়েলি হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা অঞ্চলটিকে ব্যাপক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেবে।