নির্যাতন ও হত্যায় জড়িতদের কোনো ক্ষমা নেই, বললেন সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতা
সিরিয়ায় স্বৈরাচার বাশার আল-আসাদ সরকারের সময় কারাবন্দীদের নির্যাতন ও হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা ও তাঁদের ক্ষমা না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আবু মোহাম্মদ আল–জুলানি (আল–শারা)।
এদিকে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের যেসব কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়েছেন, তাঁদের ফেরত পাঠাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে অনুরোধ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আসাদকে হটাতে নেতৃত্ব দেওয়া এ বিদ্রোহী নেতা।
হায়াত তাহরির আল–শাম (এইচটিএস) নেতা আহমেদ আল–শারা গতকাল বুধবার সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা জানান।
আসাদ সরকারের সময় বন্দী নির্যাতনে জড়িতদের ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে আল–শারা বলেন, ‘আমরা সিরিয়ায় তাঁদের (সাবেক কর্মকর্তাদের) খুঁজে বের করব। যাঁরা বিদেশে পালিয়েছেন, তাঁদের ফেরত পাঠাতে দেশগুলোর কাছে আমরা অনুরোধ জানাব; যাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়।’
আমরা তাঁদের (নির্যাতন–হত্যায় জড়িত সাবেক কর্মকর্তাদের) খুঁজে বের করব। যাঁরা বিদেশে পালিয়েছেন, তাঁদের ফেরত পাঠাতে দেশগুলোর কাছে আমরা অনুরোধ জানাব; যাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়।
আসাদ সরকারকে হটানোর পর সিরিয়ায় হাজারো কারাবন্দীকে মুক্ত করে দিয়েছেন বিদ্রোহীরা। কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারসহ দেশটির বিভিন্ন কারাগার থেকে নিখোঁজ হওয়া হাজারো মানুষের স্বজন এখন তাঁদের খুঁজে ফিরছেন। এমনই এক প্রেক্ষাপটে আল–শারা পতিত সরকারের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে এ হুঁশিয়ারি দিলেন।
১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে এ মুহূর্তে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা করছেন বিদ্রোহী নেতারা। নতুন এই শাসকেরা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে পারেন কি না, সেদিকে সতর্ক নজর রাখছে বিশ্ব। এ অবস্থায় বিদ্রোহী নেতার বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
একসময় আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা আল–শারার গোষ্ঠী এইচটিএস এখন সিরিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর শক্তি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন শাসকদের অবশ্যই ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের দাবি পূরণ এবং সহিংসতা ঠেকানো ও আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আসাদ সরকারকে হটানোর পর সিরিয়ায় হাজারো কারাবন্দীকে মুক্ত করে দিয়েছেন বিদ্রোহীরা। কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারসহ দেশটির বিভিন্ন কারাগার থেকে নিখোঁজ হওয়া হাজারো মানুষের স্বজন এখন তাঁদের খুঁজে ফিরছেন। এমনই এক প্রেক্ষাপটে আল-শারা পতিত সরকারের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে এ হুঁশিয়ারি দিলেন।
ইতিমধ্যে, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর লক্ষ্য, লাখ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনা, দেশবাসীর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা ও জনগণকে মৌলিক সেবা দেওয়া। তবে দেশ পুনর্গঠনের কাজ করা হবে খুবই কঠিন।
অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল–বশির বলেন, ‘আমাদের কোনো বৈদেশিক মুদ্রা নেই। নেই ঋণ ও বন্ড পাওয়ার নিশ্চয়তা। আমরা এখনো তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করছি।’
বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র
বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ শেষে সিরিয়াকে পুনর্গঠন করার কাজটি অনেক জটিল হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরাও। কেননা, গৃহযুদ্ধকালে অনেক শহর বোমা হামলায় একেবারে গুঁড়িয়ে গেছে। দেশের অনেক গ্রামাঞ্চল হয়ে পড়েছে জনশূন্য। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় মুখ থুবড়ে আছে দেশের অর্থনীতি। গৃহযুদ্ধে প্রতিবেশী তুরস্কে পালিয়ে গেছেন লাখ লাখ সিরীয়। আধুনিককালে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটগুলোর এটি একটি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। যদিও বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস ওয়াশিংটন, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আরও কিছু পক্ষের কাছে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়ার নতুন সরকারকে সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখানোর প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে হবে। যাঁদের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন, তাঁদের সবার কাছে এ সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সিরিয়াকে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার বা প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা প্রতিরোধ করতে হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব এমন আচরণ করবে, যাতে আসাদের আমলে দেশটির সরকার ও বিদ্রোহীদের ওপর আরোপ করা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া সহজ হয়।