গাজা উপত্যকায় অন্তর্বাস পরা আটক ফিলিস্তিনিরা কিছু অস্ত্র ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে সমর্পণ করছেন। কয়েক দিন ধরে এমন ভিডিও চিত্র অনলাইনে ঘুরছে। এই ভিডিও চিত্র প্রকৃত ঘটনা জল্পনার জন্ম দিয়েছে।
প্রাথমিকভাবে একই ঘটনার দুটি ভিডিও দেখা গেছে। একটি ভিডিওতে অন্তর্বাস পরা এক ব্যক্তি অস্ত্র নিচে রাখার নির্দেশনা পালন করছেন। অপর ভিডিওতে সামান্য পার্থক্য দেখা যায়।
এই ফুটেজ পরীক্ষা করেছে ‘বিবিসি ভ্যারিফাই’ (বিবিসি যাচাই-বাছাই) টিম। তারা দেখতে পেয়েছে, উভয় ভিডিও চিত্র একটি ধারাবাহিক ক্রম থেকে এসেছে। যে ধারাক্রমে মোট তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র হস্তান্তর করা হয়েছে বলে মনে হয়, তবে সঠিক পরিস্থিতি ও তার ভিডিও প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে।
গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও চিত্র দেখা যায়। পৃথক ভিডিও চিত্রে একই দৃশ্যের চিত্রায়ণ রয়েছে, তবে ভিডিও চিত্রে ছোটখাটো অসংগতি আছে। সেই অসংগতির কথা কেউ কেউ তুলে ধরছেন।
বিবিসি ভ্যারিফাই দেখতে পেয়েছে, ভিডিওগুলো কয়েকটি সিকোয়েন্সে ভাগ করে ধারণ করা হয়েছে।
ভিডিওতে আরও বেশ কিছু পুরুষকে সড়কের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁদের পরনেও অন্তর্বাস। তাঁদের মধ্যে অনেকে হাত ওপরের দিকে তুলে পরিচয়পত্র ধরে আছেন।
ঘটনাস্থল গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের উত্তরের বেইত লাহিয়া এলাকার জাতিসংঘের একটি স্কুলের সামনে বলে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি ভ্যারিফাই।
ফুটেজে এই বিষয় বোঝা যাচ্ছে, অস্ত্র সমর্পণকারী ব্যক্তি অস্ত্রের মুখে আটক অবস্থায় আছেন। ক্যামেরার বাইরে (অফ স্ক্রিন) থেকে তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল।
তাই এই বিষয় স্পষ্ট নয় যে তিনি অস্ত্র সমর্পণ করছেন, নাকি নির্দেশ অনুযায়ী তা সরিয়ে নিচ্ছেন।
লোকটি (অস্ত্র সমর্পণকারী) অন্তর্বাস পরনে ছিলেন। তাই তাঁর পক্ষে এই অস্ত্র লুকিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। আর এই অস্ত্র সম্পর্কে যে ইসরায়েলি সেনারা জানতেন না, তা–ও অসম্ভব।
ফলে ভিডিও দেখে বোঝা যাচ্ছে, এটি সত্যিকারের আত্মসমর্পণ নয়। ক্যামেরায় ধারণ করার জন্য এই দৃশ্য চিত্রায়িত করা হতে পারে।
বিবিসি বলেছে, ভিডিওতে থাকা অন্য ব্যক্তিরা হামাসের সদস্য কি না, কিংবা তাঁরা গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না, তা তারা জানে না।
ঘটনাটির ভিডিওর পাশাপাশি নানা ছবিও অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব ছবি কিছুটা ভিন্ন কোণ (অ্যাঙ্গেল) থেকে তোলা হয়েছিল। বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে ঘটনাবলি একাধিক ব্যক্তি ভিডিও বা ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের আটকের এমন দৃশ্য তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে করা আচরণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রেডক্রসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সব বন্দীর সঙ্গে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে আচরণ করা উচিত।
বিবিসি বলছে, যে যা-ই বলুক, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে অগ্রগতির প্রমাণ দেখাতে আগ্রহী ইসরায়েল।
গতকাল রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোয় হামাসের বেশ কিছু সদস্য ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। হামাসের যোদ্ধারা নিজেদের অস্ত্র পরিত্যাগ করছেন। তাঁরা ইসরায়েলের সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন।
হামাসকে নির্মূল প্রসঙ্গে নেতানিয়াহু বলেন, আরও সময় লাগব। যুদ্ধ পুরোদমে চলছে, তবে এই যুদ্ধ হামাসের জন্য শেষের শুরু।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এসব ভিডিওর ঘটনা নিয়ে করা প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেয়নি। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বিবিসির কাছে দাবি করেন, আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে আচরণ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রায়ই তাঁদের শরীর থেকে পোশাক সরিয়ে নিতে হয়, যাতে তাঁদের তল্লাশি করা যায়। নিশ্চিত করা যায়, তাঁরা বিস্ফোরক বা অন্য অস্ত্র লুকিয়ে রাখছেন না।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। মাঝে ২৪ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি ছিল। ইসরায়েলের হামলায় সাড়ে ১৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।