আরব লিগে ফেরানো হলো সিরিয়াকে
সিরিয়া সরকারকে আরব লিগে স্বাগত জানানো হলো। রোববার আরব দেশগুলোর জোট থেকে আবার সিরিয়াকে কাছে টেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর মধ্য দিয়ে এক দশকের বেশি সময় পর বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ আরব লিগে ফিরে এলেন। মিসরের রাজধানী কায়রোতে আরব লিগের সদর দপ্তরে সংস্থার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সিরিয়াকে পুনরায় সদস্য করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। রিয়াদে ১৯ মে আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগেই সিরিয়াকে সংস্থার সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হলো।
২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়ার আরব লিগের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। ওই সময় আরব লিগের ২২ সদস্য সিরিয়াকে নিষিদ্ধ করে। দেশটির ওই সময়ের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সরকারের দমনপীড়নের পর পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। সংঘাতে ৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যান। এ ছাড়া হাজারো মানুষ বাস্তুহারা হয়। ধ্বংস হয় অবকাঠামো।
দেশটির কিছু অঞ্চল এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও উত্তরের অনেক এলাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। গত এক যুগে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকার রাজনৈতিক সমাধানে আসতে পারেনি।
গত সপ্তাহে সিরিয়াকে আরব লিগে ফিরিয়ে নিতে জর্ডানের উদ্যোগে মিসর, ইরাক, সৌদি আরব ও সিরিয়ার কূটনীতিকদের মধ্যে বৈঠক হয়। ওই সময় আশ্বাস দেওয়া হয়, সংস্থার শীর্ষ বৈঠকের আগেই সিরিয়াকে আরব লিগে ফিরিয়ে আনা হবে। আরব লিগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর সর্বসম্মতিক্রমে সিরিয়াকে আরব লিগে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নয়। পরে এক বিবৃতিতে বলা হয়, গতকাল থেকে সিরিয়ার সরকারি প্রতিনিধিরা আরব লিগের বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন।
সিরিয়ায় সংঘাত শুরুর পর থেকে আসাদকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। কিন্তু আরব লিগের সম্মেলনের আগে থেকেই সিরিয়াকে আরব লিগে ফেরাতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিবৃতিতে বলা হয়, সিরিয়া সংকট সমাধানের প্রচেষ্টায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখতে চায় আরব দেশগুলো। এ ছাড়া মানবিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে কাজ করবে আরব দেশগুলো। সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে সংকট সমাধানের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে একটি মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটি তৈরির বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবদুল ঘেইত বলেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যদি চান, তবে তিনি এ মাসের শেষ দিকে আরব লিগের সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন। তিনি আরও বলেন, রোববার (গতকাল) থেকেই আরব লিগের পূর্ণ সদস্য হয়ে গেছে সিরিয়া। আজ সোমবার থেকেই তাদের আসন রাখার অধিকার রয়েছে। আরব লিগের সম্মেলনের আয়োজক সৌদি আরবের পক্ষ থেকে তাদের আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। যদি আসাদ আসতে ইচ্ছা করেন, তবে তিনি এতে যোগ দিতে পারবেন।
আরবের অনেক দেশ ধীরে ধীরে আসাদকে মেনে নিতে শুরু করেছে। কারণ, তিনি ধীরে ধীরে বিদ্রোহীদের কাছে হারানো এলাকা ফিরে পেতে শুরু করেছেন। এ জন্য তিনি ইরান ও রাশিয়ার সমর্থন পাচ্ছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৮ সালে সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। আরব লিগে সিরিয়াকে ফেরাতে দেশটি নেতৃত্ব দিয়েছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। আসাদ সরকারের পক্ষ থেকে আরব দেশগুলোর কাছে পৌঁছানোর একটি সুযোগ তৈরি হয়। গত মার্চ মাসে সৌদি আরব ও ইরান কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নিলে সিরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পথে গতি আসে।
গত মার্চে সৌদির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, রিয়াদ ও দামেস্ক দূতাবাস চালু করার বিষয়ে আলোচনা করছে। গত এপ্রিলে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান দামেস্ক সফর করেন। সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মিকদাদ সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলো সফর করে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা চালান। গত সোমবার তিনি আম্মানে জর্ডান, সৌদি, ইরাক ও মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে চলমান সংঘাত বন্ধ নিয়ে আলোচনা করেন।