গাজার তেল আল-সুলতানের অলিগলি, ভবনের নিচে একের পর এক লাশ
সড়কে পড়ে আছে লাশ, বিস্ফোরণে ঘরের ধ্বংসস্তূপের ভেতর দেখা যাচ্ছে লাশ। কোনো কোনো লাশ ইটপাথরের ধ্বংসস্তূপের এতটা নিচে পড়ে আছে যে উদ্ধারকর্মীরা হয়তো কখনোই সেখানে পৌঁছাতে পারবেন না। ভবিষ্যতে কোনো দিন যুদ্ধ শেষ হলে কেউ হয়তো আসবেন ও সেই সব লাশের যথাযথ সৎকার হবে।
ফিলিস্তিনের গাজা নগরীর শিল্পাঞ্চল মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। পুরো অঞ্চলের অলিগলি ও বিধ্বস্ত ভবনের নিচে পাওয়া যাচ্ছে একের পর এক লাশ।
গাজার সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা লাশ উদ্ধারের কাজ করছেন। তাঁরা এক মুহূর্তের জন্যও চোখ বন্ধ করে খানিকটা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। পুরো এলাকার বাতাসে লাশের পচা দুর্গন্ধ। তার ওপর উদ্ধারকর্মীদের সব সময় সতর্ক থাকতে হচ্ছে। কারণ, যেকোনো সময় আবার আকাশ থেকে হতে পারে হামলা। হতে পারে মৃত্যু।
গাজা নগরীর পূর্বাঞ্চলের শুজাইয়া বা গাজার দক্ষিণের নগরী রাফার কাছের তেল আল-সুলতানে শেষ কয়েক দিনে এতটা ভয়ংকর লড়াই হয়েছে যে সিভিল ডিফেন্সের অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত বের হতে পারেনি।
স্থানীয় সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল মুঘায়ের বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী যেসব অঞ্চলের দখল নিয়েছে, তার কাছাকাছি কোথাও প্রবেশ করা খুবই বিপজ্জনক, তারপরও মানুষের জীবন রক্ষা করতে আমরা ওই সব এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করি।’
মুঘায়ের ও তাঁর সহকর্মীরা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন। লোকজন হারানো স্বজনের খোঁজে তাঁদের ক্রমাগত প্রশ্ন করতে থাকেন।
কিন্তু লাশের পরিচয় শনাক্ত করা খুব কঠিন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘কিছু লাশ এত পচে যায় যে সেগুলোর পরিচয় শনাক্ত করা অসম্ভব।’ অনেক সময় পশুও লাশ নষ্ট করে ফেলে। জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। এ কারণে পোশাক দেখে লাশ শনাক্তের সুযোগও থাকে না বলে জানান তিনি।
শুধু তা-ই নয়, উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে মুঘায়ের ও তাঁর সহকর্মীদের জীবনের ঝুঁকিও নিতে হয়। জ্বালানির অভাবে অ্যাম্বুলেন্সগুলো অনেক সময় অচল হয়ে পড়ে। তেল আল-সুলতানে একটি অ্যাম্বুলেন্স জ্বালানির অভাবে অচল হয়ে পড়লে সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের সেটি ঠেলে সরাতে হয়। কাজটি তাঁদের জন্য দারুণ চাপের ছিল বলে জানান মুঘায়ের। বলেন, যেকোনো সময়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার শিকার হওয়ার ঝুঁকি ছিল।
সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ে দেরি হওয়ার কারণেও অনেক সময় গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করা সম্ভব হয় না বলে জানান তিনি। বলেন, ‘দুই দিন আগে আল-সালিহিন মসজিদের কাছে একজন আহত হয়েছেন বলে আমরা খবর পেয়েছি। কিন্তু সমন্বয়ে দেরি হচ্ছে বলে আমরা সেখানে যেতে পারছি না। এর ফলে হয়তো তিনি মারা যাবেন।’
গাজা নগরী ও শুজাইয়ার মতো এলাকা, যেখানে লড়াই চলেছে, সেখান থেকে লোকজন প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেছেন। যাঁরা পালিয়ে গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই প্রাণ বাঁচতে আরও কয়েকবার গাজার এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পালিয়ে গেছেন।
তাঁদের কাছে গাজা এমন বিশ্ব, যেখানে আইনকানুন বলে কিছু নেই। বিশ্বনেতারা তাঁদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বটে, কিন্তু কেউ তাঁদের এই নরকযন্ত্রণা থেকে উদ্ধারে এগিয়ে আসছেন না। যেকোনো সময় মারা পড়তে পারেন, এর চেয়ে বড় সত্য গাজার বাসিন্দাদের জীবনে এখন আর কিছু নেই।
ফিলিস্তিনের গাজা নগরীর শিল্পাঞ্চল গতকাল শুক্রবার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। গাজা নগরীর শুজাইয়া ও তাল আল-হাওয়া এলাকায় রাস্তাঘাট ও বিধ্বস্ত ভবন থেকে ৯০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গাজা প্রশাসনের জরুরি পরিষেবা বিভাগ এ কথা জানিয়েছে।