ইসরায়েলি হামলায় ব্রিটিশ নারীর ৫ স্বজন নিহত, নাগরিকদের ‘এখনই’ লেবানন ছাড়ার তাগাদা যুক্তরাজ্যের

এখনো কয়েকটি এয়ারলাইনস লেবাননে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ইসরায়েলের হামলার মধ্যেই বৈরুত বিমানবন্দর থেকে একটি উড়োজাহাজ ছেড়ে যেতে দেখা যাচ্ছেছবি: এএফপি

ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাত তীব্র হওয়ায় যুক্তরাজ্য তার নাগরিকদের ‘এখনই’ লেবানন ছাড়তে বলেছে। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছানো এক ব্রিটিশ নারী জানান, লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন।

ব্রিটিশ ওই নারীর নাম সানা শামসেদ্দিন। দুই শিশুসন্তান ও স্বামী আব্বাসকে নিয়ে হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সাংবাদিকদের তিনি জানান, তাঁর চাচা–চাচি ও তাঁদের তিন মেয়ে লেবাননের টাইর নগরে নিজেদের বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। নিহত তিন বোনের সবার বয়স কুড়ির কোঠায় ছিল। তাঁদের মধ্যে দুই বোন চিকিৎসক ও এক বোন প্রকৌশলী ছিলেন। ১০ দিনের মধ্যে প্রকৌশলী বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

সোমবার সকালে বাড়ির ঠিক পাশে বিশাল এক বোমা পড়ার শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙে। খবরে দেখি, এক ঘণ্টার মধ্যে আরেক দফা বোমা হামলা শুরু হবে। আমরা বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিইনি। কারণ, আমরা তো যুদ্ধ করছি না...আমরা সাধারণ নাগরিক।
সানা শামসেদ্দিন, লেবানন থেকে পালিয়ে আসা ব্রিটিশ নাগরিক

গত সোমবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও রাজধানী বৈরুতের পূর্বাঞ্চলে তীব্র বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এসব এলাকা লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। গত শুক্রবার বৈরুতের একটি শহরতলিতে এমনই এক হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন।

লেবানন থেকে পালিয়ে আসায় একধরনের অপরাধবোধে ভুগছেন সানা। এই নারী বলেন, ‘সোমবার সকালে বাড়ির ঠিক পাশে বিশাল এক বোমা পড়ার শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙে। খবরে দেখি, এক ঘণ্টার মধ্যে আরেক দফা বোমা হামলা শুরু হবে। আমরা বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিইনি। কারণ, আমরা তো যুদ্ধ করছি না...আমরা সাধারণ নাগরিক।’

আরও পড়ুন

ঘটনার বর্ণনা টেনে সানা বলেন, ‘আমি হোয়াটসঅ্যাপে আমার চাচার সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে বলেন, “সব ঠিক আছে। তোমাদের ওপর বোমা হামলা হবে না।” কিন্তু তারা (ইসরায়েল) আমাদের চারপাশে পুনরায় বোমাবর্ষণ শুরু করে। আমরা আর মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে পারিনি।’

আরও পড়ুন

এরপর সড়কপথে প্রায় ১০ ঘণ্টা ভ্রমণ করে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছান সানা। গিয়ে দেখেন, তাঁর চাচা ও তাঁর পরিবার সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমি ও আমার স্বামী আমাদের বাকি পরিবারকে অনিরাপদ স্থানে ফেলে রেখে এখানে (ইংল্যান্ডে) পালিয়ে আসায় অপরাধবোধে ভুগছি।’ তাঁর চাচা একজন ভালো মানুষ ছিলেন বলেও জানান তিনি। সানার স্বামী আব্বাস একজন বায়োকেমিক্যাল প্রকৌশলী।

আরও পড়ুন

লেবাননে প্রায় পাঁচ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত কয়েক শ জন শুধু যুক্তরাজ্যের নাগরিক।

গত সোমবার থেকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও রাজধানী বৈরুতের পূর্বাঞ্চলে তীব্র বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এসব এলাকা লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। শুক্রবার বৈরুতের একটি শহরতলিতে এমনই এক হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন।

ব্রিটিশ নাগরিকদের লেবানন ছাড়তে তাগাদা

হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল লড়াই তীব্র হওয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য সরকারের তরফে ব্রিটিশ নাগরিকদের লেবানন ছাড়তে বলা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন অফিসের (এফসিডিও) পক্ষ থেকে বলা হয়, যে ফ্লাইট পাওয়া যায়, তাতেই ব্রিটিশ নাগরিকদের লেবানন ছাড়া উচিত। আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য উড়োজাহাজের ফ্লাইট বাড়ানো ও আসন নিশ্চিত করতে কাজ করছি।’

আরও পড়ুন

ইসরায়েলের বিমান হামলার কারণে বিভিন্ন এয়ারলাইনস লেবাননে তাদের ফ্লাইট চলাচল আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। তবে এখনো দেশটিতে কিছু বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল করছে। লেবাননে অবস্থান করা বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা ওই সব ফ্লাইটে দেশটি ছাড়ার চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন