আমস্টারডামে কেন সেদিন ইহুদিদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল

নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে ইসরায়েলের ফুটবল ক্লাব ম্যাকাবি তেল আবিব ও অ্যাজাক্সের মধ্যে ইউরোপা লিগের ফুটবল ম্যাচের আগে ও পরে ইসরায়েলি সমর্থক ও সম্ভবত ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

আমস্টারডামের জোহান ক্রুইফ অ্যারেনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ইয়োহান ক্রুইফ আমস্টারডামের প্রধান অ্যারেনা ও অ্যাজাক্সের হোম স্টেডিয়াম ও এর আশপাশের এলাকায় হামলা করা হয়। ওই ফুটবল ম্যাচে অ্যাজেক্স ৫-০ গোল জয়ী হয়েছিল।

আল–জাজিরার প্রতিবেদক স্টিপ ভ্যাসেন আমস্টারডাম থেকে বলেন, কয়েক দিন ধরে বাড়তে থাকা উত্তেজনার সূত্র ধরে ইসরায়েলি সমর্থক ও ফিলিস্তিনপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

স্টিপ বলেন, ম্যাকাবি তেল আবিবের হাজারো সমর্থক সেদিন আমস্টারডামে খেলা দেখতে আসেন। তাঁরা সংঘর্ষ শুরু হওয়ার আগে সেখানে একটি সমাবেশ করেন। এ সময় তাদের ইসরায়েলি পতাকা উড়তে দেখা যায়। একটি ভবনের দেয়াল থেকে ফিলিস্তিনের পতাকা খুলে ফেলে তাতে আগুন দেন ইসরায়েলি সমর্থকেরা।

পুলিশ গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছে, ভবন থেকে ফিলিস্তিনের পতাকা ছিঁড়ে ফেলা এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনার পর তাঁরা সতর্ক অবস্থান নেন।

নেদারল্যান্ডসের পুলিশপ্রধান পিয়ার হোলা বলেন, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলাকারীরা হঠাৎ আক্রমণ করে সটকে পড়ার কৌশল নিয়েছিল। ফলে এসব হামলা ঠেকানো যায়নি।

ঘটনাস্থলে ধারণ করা বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি একটি ভবনের দেয়াল থেকে ফিলিস্তিনের পতাকা নামিয়ে ফেলছেন। এ সময় ইসরায়েলি ফুটবল সমর্থকেরা সমস্বরে স্লোগান দিতে থাকেন। খেলা শুরু হওয়ার আগে স্টেডিয়ামেও ম্যাকাবি তেল আবিবের সমর্থকদের আরববিদ্বেষী আপত্তিকর ও উসকানিমূলক বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

আমস্টারডাম সিটি কাউন্সিলের সদস্য জ্যাজি ভেলদুজেন বলেন, ইসরায়েলি ফুটবল–ভক্তরা শহরে পৌঁছেই সহিংসতা উসকে দেয়। খেলা শুরু হওয়ার আগেই তাঁরা ফিলিস্তিনি সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়।

সিটি কাউন্সিলের এই সদস্য আরও বলেন, আমস্টারডামের যেসব বাড়িতে ফিলিস্তিনি পতাকা টাঙানো ছিল, সেসব বাড়িতে গিয়ে তারা হামলা চালায়। এ কারণেই মূলত সংঘাত শুরু হয়। পরে আমস্টারডামের বাসিন্দারা জড়ো হয়ে ম্যাকাবি তেল আবিব দলের সমর্থকদের হামলা রুখে দেয়।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমস্টারডামে হামলার ঘটনায় ১০ ইসরায়েলি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এ ঘটনাকে ‘ইসরায়েলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ সহিংস ঘটনা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু কী কারণে এ সংঘাতের সূত্রপাত, সে বিষয়ে কার্যালয়টি কিছুই বলেনি।

ভবিষ্যতে ক্রীড়া অনুষ্ঠানগুলোয় এ ধরনের সহিংসতা রোধে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে একটি পরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরববিদ্বেষী স্লোগান দিয়ে ফিলিস্তিনের পতাকা নামিয়ে ফেলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। নেদারল্যান্ডসকে এ ঘটনায় যথাযথ তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে।

আমস্টারডামের বাসিন্দা মো কোটেশ আল–জাজিরাকে বলেন, গত বুধবার ইসরায়েলি সমর্থকেরা রাস্তায় নির্দোষ মানুষের ওপর হামলা চালায়, মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে, ট্যাক্সিচালকদের মারধর করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদের প্রতিহত করে।

গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন আমস্টারডামে সহিংস ঘটনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে গণহত্যাকে স্বাভাবিকভাবে দেখা, বর্ণবাদ এবং ইসলামভীতির মতো বিষয়গুলো নিয়ে উসকানি দেওয়ার বিষয়গুলো তাদের ভাবিয়েছে। ইসরায়েলি সমর্থকদের এসব আচরণকে আমলে নিয়ে এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ফিফা ও উয়েফার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

এর আগে ইউরোপের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা খেলার আগে ও পরে হামলার তীব্র নিন্দা জানায়।