মধ্য গাজায় বড় হামলা, পালাচ্ছে দেড় লাখ বাসিন্দা
ইসরায়েলি বাহিনী এবার গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে বড় পরিসরে অভিযান শুরু করেছে। এত দিন গাজা নগরসহ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটির উত্তর ও দক্ষিণে হামলার তীব্রতা ছিল বেশি। জাতিসংঘ বলছে, টানা হামলায় নতুন করে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ শুক্রবার জানায়, এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১৮৭ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৫০৭ জনে।
তিন দিন ধরে গাজার মধ্যাঞ্চলে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলার পাশাপাশি সাঁজোয়া যান ও ভারী অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন শহর ও শরণার্থী শিবিরে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। হামলায় মধ্য গাজায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছু জায়গায় হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাপক লড়াই চলছে। ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হামলার একটি ভিডিও চিত্র প্রকাশ করেছে হামাস।
গাজার মধ্যাঞ্চলের বুরেজি, নুসেইরাত ও মাঘাজি শরণার্থীশিবিরে বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ করছে ইসরায়েলি বাহিনী। আবাসিক ভবন লক্ষ্য করেও হামলা হচ্ছে। হামলার আতঙ্কে বাসিন্দারা গাজার দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যাচ্ছেন। হামলার মধ্যেই বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব এলাকার বাসিন্দা দেড় লাখের বেশি। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্দেশ আসার পর বাসিন্দারা আবাসস্থল ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন।
বুরেইজ শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী ওমর তাঁর পরিবারের ৩৫ সদস্যসহ পালাতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘সময় এসে গেছে। ভেবেছিলাম পালাতে হবে না। কিন্তু এখন দেখছি পালানো ছাড়া উপায় নেই। ইসরায়েলি নৃশংস যুদ্ধ আমাদের তাঁবুতে এনে রেখেছে।’
হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, মধ্য গাজার এসব বাসিন্দার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ইসরায়েলি হামলায় উত্তর গাজা ধ্বংসস্তূপের রূপ নিয়েছে। এদিকে দক্ষিণ গাজাতেও চলছে বড় পরিসরে হামলা। ফলে উত্তর বা দক্ষিণে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই।
এদিকে দক্ষিণ গাজায় মিসর সীমান্তবর্তী রাফাতেও বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের সেনারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলে নতুন নতুন এলাকায় হামলা শুরু করার পর থেকে গত কয়েক দিনে প্রায় এক লাখ ফিলিস্তিনি রাফার দিকে গেছেন।
খাবার নেই, ত্রাণের গাড়িতেও হামলা
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক শরণার্থী সংস্থা আজ জানিয়েছে, ত্রাণবাহী গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চেল ত্রাণ পৌঁছে ফেরার সময় গাড়িবহরটিতে হামলা করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই পথ দিয়ে ত্রাণবাহী গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, হামলায় একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।
জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস গাজার পরিস্থিতিকে হতাশাজনক উল্লেখ করে বলেন, ‘অসম্ভব এক পরিস্থিতির মধ্যে আছেন গাজার বাসিন্দা ও ত্রাণকর্মীরা।’ তিনি বলেন, অবিরত বোমাবর্ষণ, দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থা, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, ত্রাণের গাড়িতে হামলা ও তল্লাশিচৌকিতে বিলম্বের মতো চ্যালেঞ্জের কারণে বহু মানুষকে খাবার দেওয়া যাচ্ছে না।
ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রায় সব বাসিন্দা এখন উদ্বাস্তু। ত্রাণ হিসেবে দেওয়া খাবারই এখন তাঁদের ভরসা। কিন্ত পর্যাপ্ত ত্রাণ না আসায় তাঁদের অনেককে অনাহার–অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। কোথাও ত্রাণ হিসেবে দেওয়া খাবারবাহী একটি গাড়ি দেখলে মানুষের হুড়োহুড়ি লেগে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার মিসর সীমান্ত হয়ে গাজায় ঢোকে ১০৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক। জাতিসংঘসহ দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, অপর্যাপ্ত খাবারে এত বিপুল মানুষের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। যুদ্ধের আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৪৫৫ ট্রাক ঢুকত, সেখানে এত কম খাবারে পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব নয়।
হাসপাতালে হামলা
এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর খান ইউনিসের একটি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। আল–আমাল নামে এই হাসপাতালে উদ্বাস্তু বহু ফিলিস্তিনি ঠাঁই নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার রাফার কুয়েতি হাসপাতালের কাছে আবাসিক একটি ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। এতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে খান ইউনিসে একটি বাড়িতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় আট ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সন্ধ্যায় জানায়, এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১৮৭ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলার পর থেকে গাজায় অন্তত ২১ হাজার ৫০৭ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৫৫ হাজার ৬০৩ জন।