মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত অবসানে দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধিতা করায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাঁর সমালোচনায় সরব হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলসহ জোটভুক্ত একাধিক দেশের শীর্ষ কূটনীতিকেরা। বোরেল বলেন, গাজায় হামাসকে ধ্বংসের ইসরায়েলের পরিকল্পনা কাজ করছে না।
ব্রাসেলসে ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মাসিক বৈঠকের আগে গতকাল সোমবার দুই রাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দেন জোটের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান। তিনি বলেন, ‘শুধু সামরিক উপায়ে’ শান্তি অর্জন করতে পারবে না ইসরায়েল।
এদিকে গাজার খান ইউনিসে ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ১৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৪০ জন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় ২৫ হাজার ২৯৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬৩ হাজার ফিলিস্তিনি।
‘একমাত্র সমাধান’
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন ও গুরুত্বপূর্ণ আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। জোটের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধানও আলাদাভাবে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
গাজা যুদ্ধের পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নেতানিয়াহুর বিরোধিতাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে জাতিসংঘের জানানো নিন্দার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন বোরেল। তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা করতে চাই, সেটা হলো দুই রাষ্ট্র সমাধানে পৌঁছানো। তাই এ নিয়ে কথা বলতে দিন।’
ইসরায়েলের উদ্দেশে ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান বলেন, ‘শুধু সামরিক উপায়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন করা যাবে না। এ ছাড়া বিকল্প অন্য কোনো সমাধান তাদের চিন্তায় আছে? সব ফিলিস্তিনিকে চলে যেতে বাধ্য করা? তাঁদের হত্যা করা?’
বোরেল আরও বলেন, ‘গাজায় হামাসকে ধ্বংস করার ইসরায়েলের পরিকল্পনা কাজ করছে না। ইসরায়েলের বিরোধিতা সত্ত্বেও ইইউর অবশ্যই দুই রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা এগিয়ে নেওয়া উচিত।’
আমরা যেটা করতে চাই, সেটা হলো দুই রাষ্ট্র সমাধানে পৌঁছানো।জোসেপ বোরেল, ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবক বলেন, ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র সমাধান। এমনকি যাঁরা এ বিষয়ে জানতে চান না, এখন পর্যন্ত তাঁরাও এর বিকল্প কিছু উপস্থাপন করতে পারেননি।’ এর আগে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও নেতানিয়াহুর অবস্থানের সমালোচনা করেন।
ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বৈঠকের আগের দিন রোববার ব্রাসেলসে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। এ সময় গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে গাজায় বন্দী থাকা ইসরায়েলিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে। বন্দীদের স্বজনের রোববার রাতে জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছে বিক্ষোভ করেছেন।
এ ছাড়া গতকাল বন্দীদের স্বজনদের বিক্ষোভের মুখে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে আর্থিক কমিটির অধিবেশন বিঘ্নিত হয়। বিক্ষোভকারীদের একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘তারা (জিম্মিরা) যখন মরছে, তখন তোমরা এখানে বসতে পারবে না।’
একপর্যায়ে ১২ জনের বেশি বিক্ষোভকারী অধিবেশনের কক্ষ ঢুকে পড়েন। ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে খান ইউনিস
ফিলিস্তিনের গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খান ইউনিসে জল, স্থল ও আকাশপথে সর্বাত্মক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। গতকাল শহরের দুটি হাসপাতালে যাওয়ার সড়কে অবস্থান নেয় ইসরায়েলি ট্যাংক।
দক্ষিণ গাজার প্রধান শহর খান ইউনিস দখল করতে গত সপ্তাহে বড় ধরনের হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এই প্রথম ইসরায়েলি ট্যাংক ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় জেলা আল-মাওয়াসিতে পৌঁছে গেছে। সেখানকার আল-খায়ের ও আল-আমাল হাসপাতালে থাকা লোকজন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
ইসরায়েলের নতুন ধাপের যুদ্ধে গাজা উপত্যকার অবশিষ্ট এই এলাকার গভীরে লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে উত্তর ও মধ্য গাজার বাসিন্দারা এ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার বেশির ভাগই খান ইউনিসের ঠিক উত্তরের দেইর আল-বালাহ আর দক্ষিণে রাফা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি বিভিন্ন ভবনে এবং তাঁবু দিয়ে তৈরি বিশাল শরণার্থীশিবিরে গাদাগাদি করে থাকছেন তাঁরা।