অভিমত
গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের পর এবার ভাগাভাগির পালা
যুদ্ধ শেষে গাজার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা ইসরায়েলের। এ জন্য গাজাকে তারা তিন ভাগ করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র চায় প্যালেস্টাইন অথরিটি বা মিসর গাজার দায়িত্ব নিক। কট্টর ইসরায়েলিরা চান, গাজাবাসীকে সিনাই পাঠিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের এই জমি বণ্টন করে দেওয়া হোক। রিপাবলিকান নীতিনির্ধারকদের ঘনিষ্ঠ ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট আলাদা ফিলিস্তিনি প্রশাসন গঠনের কথা বলছে। এভাবে গাজা নিয়ে চলছে টানাটানি।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। কথাটা কার্ল মার্ক্সের। তিনি বলেছিলেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে প্রথমে প্রহসন হিসেবে, দ্বিতীয়বার ট্র্যাজেডি হিসেবে। ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে এখন যা ঘটছে, তা মার্ক্সস বর্ণিত ট্র্যাজেডি। প্রহসনটি ঘটেছিল ১৯১৬ সালে। তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি মার্ক সাইকস ও ফরাসি সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি ফ্রাঁসোয়া জর্জ পিকো নিজেদের ইচ্ছেমতো মধ্যপ্রাচ্য ভাগাভাগির এক নতুন মানচিত্র বানান। যাঁদের দেশ, যাঁরা সেসব ভূখণ্ডে বসবাস করেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার কোনো প্রয়োজন বোধ করেননি তাঁরা।
বিদেশি প্রভুদের মালিকানায় তাঁরা থাকতে চান কি না, তা বিচারের কোনো প্রশ্ন নেই। বিদেশি মহাপ্রভুর দুই প্রতিনিধি টেবিলের ওপর মধ্যপ্রাচ্যের একটি মানচিত্র রেখে পেনসিলে দাগ দিয়ে ঠিক করে দিলেন, তাঁরা কে কোন দেশ, তাঁদের মধ্যে কীভাবে ভাগাভাগি করে নেবেন। মিত্র হওয়ায় কাকেই বা দয়ার দান হিসেবে কোন অঞ্চল ছেড়ে দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্তও তাঁরাই নিলেন।
এখন গাজা নিয়ে ঠিক সেই কাণ্ড শুরু হয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজায় তাদের চলতি সামরিক অভিযান শেষ হলে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য সামরিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। অর্থাৎ তারাই হবে সেই অঞ্চলের কার্যকর মালিক। বাগে আনতে তারা গাজাকে তিন ভাগে ভাগ করে নেবে। নতুন ইহুদি বসতিও বসবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, না, না, সেটা করা ঠিক হবে না। নিরাপত্তার ভার নেওয়া মানে গাজায় আবার ইসরায়েলি অধিগ্রহণ। তার চেয়ে ভালো হয়, যদি মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে প্যালেস্টাইন অথরিটিকে (পিএ) একই সঙ্গে পশ্চিম তীর ও গাজার শাসনভার তুলে দেওয়া হয়।
ইসরায়েলের ভেতরে অবশ্য অনেকেই বলে থাকেন, ফিলিস্তিন আসলে জর্ডানের একটি সম্প্রসারিত অংশ। তাদেরই উচিত অঞ্চলটির শাসনভার গ্রহণ করা। ১৯৬৭ সালের আগপর্যন্ত তারাই এই অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিল। হাসান ইসমায়েক নামে জর্ডানের এক ব্যবসায়ী ও কলাম লেখকও বছর দুয়েক আগে ফরেন অ্যাফেয়ার্স পত্রিকায় সেই একই প্রস্তাব করেছিলেন। তাঁর সেই কথার অবশ্য তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ খোদ জর্ডান থেকেই করা হয়েছিল।
কেমন হবে যুদ্ধোত্তর গাজা
ইসরায়েলি গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুত এক নথিতে বলা হয়েছে, গাজার ২৩ লাখ মানুষকে সিনাই উপদ্বীপে পাঠিয়ে দিলে সব ঝামেলা চুকে যায়। অতি দক্ষিণপন্থী হিসেবে পরিচিত ইসরায়েলি এক মন্ত্রী সে প্রস্তাব সমর্থন করে বলেছেন, গাজাবাসীকে হটানোর পর সে ভূখণ্ডটি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে বিনা মূল্যে বণ্টন করা হোক। আরেক মন্ত্রী বলেছেন, পারমাণবিক বোমা মেরে সবাইকে খতম করা হোক। যারা বেঁচে থাকবে, তাদের আয়ারল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। (কারণ, আয়ারল্যান্ড ফিলিস্তিনিদের প্রতি অধিক নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে)।
কোনো কোনো রক্ষণশীল পণ্ডিত অবশ্য বলেছেন, এসব কোনোটাই কাজের কথা নয়। গাজা ও পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনিদের হাতেই থাকতে হবে। তবে এ জন্য কয়েকটি শর্ত বেঁধে দিতে হবে। রিপাবলিকান নীতিনির্ধারকদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট এক মস্ত গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখে জানিয়েছে, এই কাজ তিন পর্যায়ে করতে হবে। প্রথম কাজ হবে, একটি ফিলিস্তিনি প্রশাসন গঠন করা।
গাজা ও পশ্চিম তীরের নির্ভরযোগ্য (অর্থাৎ অনুগত) লোকদের নিয়ে এই প্রশাসন গঠিত হবে। দেশের বাইরে বসবাসরত অনাবাসী ফিলিস্তিনিদের এই প্রশাসনে স্থান দেওয়া যেতে পারে। নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব নিতে হবে সেই পাঁচ দেশকে, যারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিয়েছে। আর নাগরিক কল্যাণ ও গাজার পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিতে হবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে।
মোদ্দাকথা হলো, আর যা–ই হোক হামাসকে কোনোভাবে কোনো কাজে যুক্ত করা যাবে না। এই লক্ষ্যের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ, যারা গাজার চলতি ধ্বংসযজ্ঞে ইসরায়েলের দুখানা হাতই শক্তভাবে ধরে আছে, তাদের সবাই সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু হামাসকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করলে গাজার আশু দায়িত্বভার কে নেবে? যুক্তরাষ্ট্রের খুব ইচ্ছা, এই কাজে নেতৃত্ব দিক মিসর, আর তার পাশে থাকুক উপসাগরীয় দেশগুলো। তাদের মানিব্যাগ থেকেই গাজার পুনর্গঠনের খরচাপাতি তোলা যাবে।
ফিলিস্তিনি বুদ্ধিজীবী রাশিদ খালিদি বলছিলেন, টোপ হিসেবে মিসরকে ১৬ হাজার কোটি ডলার ঋণ মওকুফের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যদ্দুর জানা গেছে, মিসর সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এই মুহূর্তে এমন প্রস্তাবে সমর্থন জানালে দেশের ভেতর রাজনৈতিক প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে। আগামী বছরের নির্বাচনের আগে তিনি এমন বিপদ সাধ করে ডেকে আনতে চাইবেন না।
আমেরিকার শিরঃপীড়া
হামলার প্রথম মুহূর্ত থেকে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র যে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়, তাতে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিবাদ ওঠেনি। কিন্তু গাজার অভাবিত ধ্বংসযজ্ঞ দেখে সারা বিশ্বে এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদ উঠেছে। বাইডেন প্রশাসনের জন্য তা শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের নিজেদের মধ্যেই এই প্রশ্নে মতৈক্য নেই। ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড’ বা ‘সুইং স্টেট’ (দোদুল্যমান রাজ্য) হিসেবে বিবেচিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আরব ও মুসলিম ভোটার রয়েছেন, যাঁরা ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেনের বিরোধিতা করতে পারেন।
সম্ভবত, সেই বিষয় বিবেচনা করে হোয়াইট হাউস তাদের পুরোনো অবস্থান সামান্য বদলে নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ প্রমাণে একদিকে ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’র প্রস্তাব, অন্যদিকে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণে ইসরায়েলের ঘোষণায় আপত্তি জানিয়েছে। নতুন কূটনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছেন বটে, কিন্তু স্পষ্ট কিছুই তুলে ধরতে পারছেন না। শুধু একটা কথাই বারবার বলছেন, ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণ ছাড়া এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।
সে কথা ঠিক, কিন্তু ফিলিস্তিনি বলতে তিনি যদি মাহমুদ আব্বাসের প্যালেস্টাইন অথরিটি বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে সে প্রস্তাবের দুটি প্রধান দুর্বলতা রয়েছে। প্রথমত, হামাসকে সামরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করা গেলেও রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। হামাস ঠিক কিছু লোকের একটি বাহিনী নয় যে তাদের সবাইকে ধরে ধরে গুলি করে হত্যা করলে বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে। হামাস আসলে একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, তাদের একটি স্পষ্ট ‘আদর্শ’ রয়েছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে যেকোনো মূল্যে ও যেকোনো উপায়ে ইসরায়েলের বিরোধিতা।
আসলে, এই সেদিন পর্যন্ত হামাস ইসরায়েলের রাজনৈতিক অস্তিত্ব মানতেও অপ্রস্তুত ছিল। দখলদার ইসরায়েলের প্রতি অধিকাংশ ফিলিস্তিনি নাগরিকের দৃষ্টিভঙ্গি কঠোর। ছাড় দিতে দিতে তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। হামাসের অপসহীন অবস্থানের কারণেই গাজা ও পশ্চিম তীরে তাদের সমর্থন ও জনপ্রিয়তা প্রবল।
অন্যদিকে প্যালেস্টাইন অথরিটির নেতৃত্বে থাকা ফাতাহ ও সেই সংগঠনের নেতা মাহমুদ আব্বাসের প্রতি কার্যত ফিলিস্তিনের মানুষের কোনো সমর্থন নেই। অধিকাংশ ফিলিস্তিনি মনে করেন, তাঁরা কেবল অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজই নন, রাজনৈতিকভাবে আপসকামী। ইসরায়েলের বদান্যতায় ও যুক্তরাষ্ট্রের আনুকূল্যে তাঁরা ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। ২০০৫ সালের নির্বাচনে মাহমুদ আব্বাস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু তারপর গেল ১৮ বছর কোনো নির্বাচন আয়োজনে তিনি আগ্রহ দেখাননি। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের উভয় অংশে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে বিজয়ী হয়েছিল হামাস। সে বিজয়ের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার
করার ফলেই হামাস ও ফাতাহের বিভক্তি, যা আজও বিদ্যমান।
তাহলে হামাসকে পুরোপুরি ছাঁটাই করে ৮৭ বছর বয়সী সেই মাহমুদ আব্বাস এবং প্যালেস্টাইন অথরিটিকে যদি ফিলিস্তিনের উভয় অংশের দায়িত্বভার দেওয়া হয়, অঞ্চলটির নাগরিকেরা সানন্দে তাঁর প্রতি সমর্থন জানাবেন—এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। সবচেয়ে বড় কথা, গাজাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়ার পর ইসরায়েলি ছত্রচ্ছায়ায় মাহমুদ আব্বাস বা অন্য কোনো ফিলিস্তিনি নেতা সেখানে ঢোকার চেষ্টা করেন, তাহলে শুধু ফিলিস্তিনি নন, এই অঞ্চলের সব আরবের চোখেই তিনি হবেন খাইনুন বা বিশ্বাসঘাতক।
কার্নেগি এন্ডাউমেন্টের পক্ষে প্রস্তুত এক বিশ্লেষণে ন্যাথান ব্রাউন প্যালেস্টাইন অথরিটিকে গাজার ভার দেওয়া প্রস্তাবের অন্য আরেকটি সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। পশ্চিম তীর বা গাজা যেখানেই হোক, দুর্নীতিমুক্ত ও দক্ষ প্রশাসন ছাড়া সংকট মিটবে না। কিন্তু অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত সেই প্যালেস্টাইন অথরিটিকেই যদি ডেকে উভয় অংশের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে কাজের কাজ তো কিছুই হবে না।
একটি ‘রোডম্যাপ’
যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বসভার অন্য মোড়লেরা সত্যি যদি গাজার ধ্বংসযজ্ঞের শেষ দেখতে চায়, তাহলে যেভাবেই হোক, যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে হবে। শুধু যুদ্ধবিরতিই নয়, গাজার বুকের ওপর জেঁকে বসা প্রতিটি ইসরায়েলি ট্যাংককে ফিরিয়ে নিতে হবে, সরে যেতে হবে প্রত্যেক ইসরায়েলি সৈন্যকে। উচিত বা ন্যায়সম্মত এই দাবি ইসরায়েল সহজে মেনে নেবে—এ কথা ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু তার মাথার ওপর ছাতা ধরে আছে যুক্তরাষ্ট্র, তার নির্দেশ উপেক্ষা করার ক্ষমতা ইসরায়েলের নেই।
মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মূলে রয়েছে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের অব্যাহত দখলদারি। স্থায়ী শান্তির পূর্ব শর্ত হিসেবে এই দখলদারির অবসান ও দুই রাষ্ট্র নীতির প্রতি স্পষ্ট সমর্থন জানানোও খুব জরুরি। কীভাবে সে লক্ষ্য অর্জিত হবে, সে প্রক্রিয়া ব্যাখ্যার আগে এই লক্ষ্যের প্রতি নীতিগত সমর্থন জানানো একদম প্রাথমিক একটি পূর্বশর্ত।
যুদ্ধ শেষে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রয়োজন পড়বে, সে কথা মাথায় রেখেই বাইডেন প্রশাসন একবার মাহমুদ আব্বাস, আরেকবার মিসরের দরজায় টোকা দিচ্ছে। আমার মনে হয়, এই কাজে জাতিসংঘকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। বৃহৎ শক্তিগুলোর কারণেই এই সংস্থা ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে আছে। কিন্তু বৃহৎ শক্তি, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র যদি এ ব্যাপারে স্পষ্ট উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিশ্ব সংস্থা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে, তাতে সন্দেহ নেই। যুদ্ধবিধ্বস্ত অনেক অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা এই বিশ্ব সংস্থার রয়েছে। গাজার পুনর্গঠনের জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে, সে প্রশ্নেও যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
ফিলিস্তিন সমস্যার সামগ্রিক বিষয়টি মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি রূপরেখার ভিত্তিতে একটি নীতিমালার প্রতি যদি সমর্থন জানায়, তাহলে ফিলিস্তিনি ও প্রতিবেশী আরবদের মনে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রশ্নে আস্থা গঠনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইসরায়েলের নিজের নিরাপত্তার প্রশ্নটিও অগ্রাহ্য করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বৃহৎ শক্তিগুলোর অংশগ্রহণে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী তাকে সেই নিশ্চয়তা দিতে পারে। মিসর ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলো ফিলিস্তিনের ব্যাপারে গা বাঁচিয়ে চলার বদলে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণে সম্মত হলে ভবিষ্যতের একটি ‘রোডম্যাপ’ তৈরি হয়তো অসম্ভব হবে না।
তবে যে সিদ্ধান্তই গৃহীত হোক না কেন, তাতে সর্বাগ্রে ফিলিস্তিনিদের মতামত নিশ্চিত করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে তাঁদের অংশগ্রহণ ও সম্মতি নিশ্চিত করতে হবে। সাইকস-পিকোর ভুলে এই শতাব্দীর যে দীর্ঘতম ট্র্যাজেডি, তার সমাপ্তি টানতে এ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।