গাজা প্রস্তাব নিয়ে আফ্রিকার ৩ দেশেও ধাক্কা খেলেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে এর দখল নিতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের এ প্রস্তাব বাস্তবায়নে আফ্রিকার কয়েকটি দেশকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের পক্ষ থেকে থেকে বলা হয়েছে, তারা এ ধরনের কোনো প্রস্তাব পায়নি। দেশ দুটির পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর আগে আরব দেশগুলোকে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্পের ওই প্রস্তাবের বিকল্প হিসেবে আরব দেশগুলোর পক্ষ থেকে মিসরের একটি প্রস্তাবে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। মিসরের প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার পরিবর্তে গাজার পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রস্তাবের পরিবর্তে আরব নেতাদের পরিকল্পনায় গাজায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের বরাতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সরকার সুদান, সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জায়গা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

সুদানের কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর সোমালিয়া ও সোমালিল্যান্ড এ ধরনের প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

সোমালিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ মোয়ালিম ফিকি বলেন, তাঁর দেশ কোনো পক্ষের যেকোনো প্রস্তাব বা উদ্যোগ, যা ফিলিস্তিনি জনগণের পৈতৃক ভূমিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করবে, তা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করবে।

ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন এবং অবিলম্বে গাজায় অবরোধ প্রত্যাহার ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ। গতকাল যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে
ছবি: এএফপি

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসারয়েলের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করেননি। জেনেভায় জাতিসংঘের মুখপাত্র মিশেল জ্যাকিও বলেন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করে এমন যেকোনো পরিকল্পনা বা যেকোনো ধরনের জাতিগত নির্মূলের দিকে নিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে থাকব। কারণ, এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।’

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক উপদেষ্টা তাহের আল-নোনো রয়টার্সকে বলেছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের আফ্রিকায় পুনর্বাসনের প্রস্তাব বোকামি। ফিলিস্তিন ও আরব নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা তাঁদের ভূমি ছাড়বে না।’

ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তিতে রাজি হামাস

হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা আবার শুরু হয়েছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার হামাস বলেছে, তারা একজন ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মিকে মুক্তি এবং আরও চারজনের মরদেহ ফিরিয়ে দেবে।

ইসরায়েল বলেছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবে হামাস সাড়া দিচ্ছে না। হোয়াইট হাউস বলছে, হামাস যেসব দাবি করছে, তা সম্পূর্ণ অবাস্তব।

উইটকফের কার্যালয় ও মার্কিন নিরাপত্তা পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ সময়ে হামাস যেসব দাবি করছে, তা ঠিক নয়। হামাস চুক্তির সময়সীমা সম্পর্কে অবগত। সময় পেরিয়ে গেলে আমরা সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাব।’

১৫ মাসের বেশি লড়াইয়ের পর হামাস ও ইসরায়েল প্রথম ধাপে ৪৩ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। ১ মার্চ প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শেষ হয়েছে। পরবর্তী ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। গত মঙ্গলবার হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী কাতারের দোহায় আলোচনা শুরু হয়েছে। এতে ইসরায়েলের কর্মকর্তারাও যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার হামাস মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছে। এতে মার্কিন নাগরিকত্ব থাকা ইসরায়েলি সেনা এডান আলেকসান্দারকে মুক্তি ও দুই দেশের নাগরিকত্ব থাকা চারজনের মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে।

গত শুক্রবার কানাডায় জি৭ গ্রুপের বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, শুধু মার্কিন জিম্মিকেই নয়, সব জিম্মিকে মুক্ত করার বিষয়টি তাঁদের অগ্রাধিকার।

ইসরায়েলের তথ্য অনুযায়ী, উইটকফ প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু হামাস চাইছে দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর করতে। দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতিতে হামাস একসঙ্গে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে চায়। এ ছাড়া তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, গাজা থেকে ইসরায়েলের সব সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছেন, উইটকফের প্রস্তাব ইসরায়েল গ্রহণ করলেও হামাস তাদের জায়গা থেকে একটুও নড়েনি।

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। ইসরায়েল প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। হামাসের একটি সূত্র বলেছে, প্রস্তাবে নতুন শ্রেণি যুক্ত করা হয়েছে। এতে ইসরায়েলে আরও বেশি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় আরও বলেছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে দোহার আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরা হবে। এরপর জিম্মি মুক্তি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গতকালই ইসরায়েলের নতুন সিদ্ধান্ত আসার কথা।

প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হলেও ওখনো ওই নীতি মেনে চলা হচ্ছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোথাও কোথাও হামলা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩ দিন ধরে গাজায় ত্রাণসহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। সেখানের বিদ্যুৎও বন্ধ। এতে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার লোকজন।

জি৭ গ্রুপের পক্ষ থেকে গাজায় নিরবচ্ছিন্ন ত্রাণ সরবরাহ চালু রাখতে আহ্বান জানানো হয়েছে। একে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার হামাসের পক্ষ গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানানো হয়। হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১৮ জন নিহত হয়। এরপর থেকে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে ৪৮ হাজার ৫০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।