ইরানের তেল বা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা নেই, যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বাস ইসরায়েলের

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের কাছের বেন গুরিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও মোদিন শহরের মধ্যবর্তী স্থানে আগুন জ্বলছে। ১ অক্টোবর, ২০২৪ছবি: এএফপি

ইরানের সাম্প্রতিকতম হামলার জবাবে দেশটিতে শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ওয়াশিংটনকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন যে তেহরানের তেল বা পারমাণবিক স্থাপনায় তাঁরা হামলা চালাবেন না।

দুপক্ষের মধ্যে এ–সংক্রান্ত আলোচনায় যুক্ত এক ব্যক্তি এই তথ্য জানিয়েছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলে ইরানের হামলার জবাবে দেশটির তেল ও পারমাণবিক স্থাপনায় তেল আবিবের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে খোলাখুলি বিরোধিতা করেন। পরে গত সপ্তাহে এক ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ইরানে ইসরায়েলি হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আলাপ করেন বলে ওই সূত্র জানায়।

সূত্র বলেছে, ফোনালাপে নেতানিয়াহু বাইডেনকে ইরানের শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার পরিকল্পনার কথা জানান।

এ বিষয়ে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট প্রথম প্রতিবেদন করে যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ইরানের তেল ও পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে নিজের হামলার পরিকল্পনা না থাকার ব্যাপারে পুনরায় আশ্বস্ত করেছেন।

প্রকাশিত খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মতামত বিবেচনা করবে। তবে গত ১ অক্টোবর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, সেটির জবাব কী হবে, তা নিজ জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখেই চূড়ান্ত করবে ইসরায়েল। আর কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইরানের হামলায় ইসরায়েল কী জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সে বিষয়ে দেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন তাঁরা।

প্রকাশিত খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মতামত বিবেচনা করবে। তবে গত ১ অক্টোবর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, সেটির জবাব কী হবে, তা নিজ জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখেই চূড়ান্ত করবে ইসরায়েল।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্সে পাঠানো এক বার্তায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মতামত শুনেছি। তবে আমাদের জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

এর আগে বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ওই ফোনালাপকে ‘ফলপ্রসূ’ ও ‘সরাসরি’ বলে বর্ণনা করে হোয়াইট হাউস। প্রায় দুই মাসের মধ্যে এটি ছিল দুই নেতার প্রথম ফোনালাপ।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার বিষয়ে আমাদের সমর্থন ইস্পাতকঠিন। ব্যক্তিগত কূটনৈতিক আলাপের বিষয়ে (বাইডেন–নেতানিয়াহু ফোনালাপ) আমরা আলোচনা করব না। ইসরায়েলের সম্ভাব্য সামরিক অভিযান নিয়ে জানতে চাইলে আমরা আপনাকে তাদের সঙ্গেই কথা বলতে বলব।’

ইরানের সাম্প্রতিক ওই হামলায় ইসরায়েলের জবাব দেওয়ার অধিকারের পক্ষে নিজেদের অবস্থান এখনো ব্যক্ত করে চলেছেন বাইডেন ও অন্য শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কর্মকর্তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, সামনেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ অবস্থায় ইরানের তেল স্থাপনায় হামলা হলে জ্বালানির দাম বেড়ে যেতে পারে। এটি ভোটাররা ভালোভাবে নেবেন না। আবার, দেশটির পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পুরোদমে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে।

জেরুজালেমের আকাশে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট করছে ইসরায়েল। ১ অক্টোবর ২০২৪
ছবি: এএফপি

মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা, ইরানি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল দেশটিতে পরিমিত জবাব দেবে। তাঁদের বিশ্বাস, ইরানের সঙ্গে সর্বাত্মক লড়াইয়ে জড়াতে চাইবে না ইসরায়েল।

প্রসঙ্গত, ১ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা চালায় ইরান। হামলার জবাবে ইসরায়েলের সম্ভাব্য আক্রমণকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক উসকানির জবাবে দেশটিতে হামলা চালিয়েছিল ইরান।

মূলত, গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে বোমা হামলা চালিয়ে ইরানের এলিট ফোর্স ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) একজন কমান্ডারকে হত্যা করে ইসরায়েল।

ওই হামলার জবাবে ইরান এপ্রিলের মাঝামাঝি ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। সেটিই ছিল ইরান থেকে সরাসরি ইসরায়েলে হামলার প্রথম ঘটনা। গত ৩১ জুলাই ইরানে হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করে ইসরায়েল। সর্বশেষ হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করা ছিল ইসরায়েলের প্রতি ইরানের ক্ষোভের বড় কারণ।