দমন–পীড়ন উপেক্ষা করে ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ
রক্তক্ষয়ী দমন–পীড়ন উপেক্ষা করে ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মাসা আমিনির মৃত্যুর ৪০ দিন পূর্তিতে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ঘিরে উত্তেজনার মধ্যেই এই বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। খবর এএফপির।
একটি ভিডিওতে আহভাজের শহিদ চামরান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের স্লোগান দিতে শোনা যায়, ‘একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হতে পারে কিন্তু অবমাননা মেনে নেব না।’ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করতে পেরেছে এএফপি।
গত মাসে মাসা আমিনির মৃত্যুর পর শুরু হওয়া বিক্ষোভে সামনের সারিতে আছেন নারী ও স্কুলছাত্রীরা। ইসলামি প্রজাতন্ত্রে নারীদের প্রচলিত কঠোর পোশাকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মাসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
নীতি পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার তিন দিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান ২২ বছর বয়সী ওই কুর্দি তরুণী। তিনি ভাইয়ের সঙ্গে তেহরান গিয়েছিলেন।
আজ বুধবার মাসা আমিনির মৃত্যুর ৪০ দিন পূর্ণ হতে যাচ্ছে। ইরানের প্রথা অনুযায়ী কারও মৃত্যুর পর ৪০তম দিনে শোকপালনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
অ্যাকটিভিস্টরা বলেছেন, দিনটি উপলক্ষে মাসার পরিবারকে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধ করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। একই সঙ্গে আজ কুর্দিস্তান প্রদেশে মাসা আমিনির কবর জিয়ারতে না যেতেও লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনায় প্রকাশিত মাসা আমিনির পরিবারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং কোনো ধরনের দুর্ভাগ্যজনক সমস্যা এড়াতে আমরা ৪০তম দিন (চল্লিশা) পালনে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করব না।’
তবে অ্যাকটিভিস্টরা বলছেন, জোরপূর্বক এই বিবৃতি আদায় করা হয়েছে। এটা সত্ত্বেও মাসার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতে পারে বলে তাঁরা আশা করছেন।
অনলাইন ভিডিওতে গতকাল মঙ্গলবার বেহেশতি ইউনিভার্সিটি ও খাজে নাসির তুসি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ই তেহরানে অবস্থিত। পাশাপাশি খুজেস্তান প্রদেশের আহভাজের শহিদ চামরান ইউনিভার্সিটিতেও বিক্ষোভ হয়।
আগের দিন সোমবার নিরাপত্তা বাহিনী তেহরানের শহিদ সদর বালিকা কারিগরি স্কুলে ছাত্রীদের মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর নতুন করে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই স্কুলের অধ্যক্ষ মুঠোফোন ব্যবহারের বিধিমালা মেনে চলার আহ্বান জানালে ছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বিরোধের জেরে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।
অসলোভিত্তিক সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) বলেছে, মাসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে শুরু হওয়া বিক্ষোভে গতকাল নাগাদ ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের ২৯ জনই বয়সে শিশু ও কিশোর।