সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরপ্রক্রিয়ায় সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে আরব লিগের আটটি দেশ। সিরিয়া নিয়ে জর্ডানে আয়োজিত এক সম্মেলন শেষে গতকাল শনিবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এদিকে হামলা চালিয়ে সিরিয়ার সামরিক সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দেওয়া অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়া নিয়ে জর্ডানে এ সম্মেলনের আয়োজন করে আরব লিগ। বন্দরনগরী আকাবায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন শেষে যৌথ ঘোষণা দেন জর্ডান, সৌদি আরব, ইরাক, লেবানন, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
সিরিয়ার নতুন সরকারকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে উল্লেখ করে যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, সিরিয়ার নতুন সরকারে অবশ্যই সব ‘রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির’ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের জাতিগত, গোষ্ঠীগত ও ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়। এসব নাগরিকের জন্য ন্যায্যতা ও সমতার আহ্বান জানানো হয়।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২২৫৪ রেজল্যুশনের মূলনীতি অনুযায়ী জাতিসংঘ ও আরব লিগের সমর্থন নিয়ে সিরিয়ার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া উচিত। সিরিয়া সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে ঘোষিত পথনকশার ভিত্তিতে ২০১৫ সালে এই রেজল্যুশন গৃহীত হয়েছিল।
সম্মেলনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, জাতিসংঘের সিরিয়া-বিষয়ক বিশেষ দূত গেইর পিডারসন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেন আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত
হামলা চালিয়ে সিরিয়ার সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দেওয়া অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে পাঁচ ঘণ্টার কম সময়ে সিরিয়ার বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় ৬১টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করে আসা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এ কথা জানিয়েছে।
৮ ডিসেম্বর বাশার সরকারের পতন হওয়ার পর সিরিয়ায় নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০০ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দেশটির সেনা, নৌ ও বিমানঘাঁটি, অস্ত্রের মজুত, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, সিরিয়ার সামরিক সক্ষমতার ৮০ শতাংশ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সীমান্তে সিরিয়ার আরও ভূখণ্ড দখল করেছে ইসরায়েল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুনেইত্রা শহর দখল করে সেখানকার সড়ক, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত তুরস্ক
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার নতুন সরকার অনুরোধ জানালে দেশটিকে সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে তুরস্ক। আজ রোববার তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুলের এ কথা বলেছেন।
ইয়াসার গুলের বলেন, সিরিয়ার নতুন সরকারকে সময় দেওয়া উচিত। যদি নতুন প্রশাসন অনুরোধ জানায়, তাদের প্রয়োজনীয় সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছে তুরস্ক।
এদিকে এক যুগ পর গতকাল শনিবার দামেস্কে নিজেদের দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু করেছে তুরস্ক। এর আগে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ২০১২ সালে দূতাবাসটি বন্ধ হয়ে যায়। গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের একটি অংশকে সমর্থন দিয়েছিল আঙ্কারা।
বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
বাশার সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করা হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। যদিও এর আগে গোষ্ঠীটিকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ব্লিঙ্কেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এইচটিএস এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’ তবে তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ কীভাবে হলো, তা সুনির্দিষ্ট করেননি তিনি।