রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের কথিত ড্রোন চুক্তির নেপথ্যে
ইউক্রেনে সম্প্রতি ব্যাপক ড্রোন হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। অভিযোগ উঠেছে এসব ড্রোন সরবরাহ করেছে ইরান। যদিও ইরান ও রাশিয়া উভয়ই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের কথিত এই ড্রোন চুক্তির পেছনে কোন বিষয়গুলো কাজ করতে পারে, তা নিয়ে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে আল-জাজিরা।
এক বিশ্লেষণে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার ড্রোন হামলা জোরদার চলমান এই যুদ্ধে তিনটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
প্রথমত, রাশিয়াকে অস্ত্র সহযোগিতায় ইরান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র মজুত অনেক বেশি কমে এসেছে বলে শক্তিশালী ইঙ্গিত মিলছে। তৃতীয়ত, এ ধরনের হামলার তীব্রতা বাড়ায় সেটা ঠেকাতে পশ্চিমা মিত্রদের সাহায্যের দরকার হবে ইউক্রেনের।
ইরান ও রাশিয়ার অস্বীকার সত্ত্বেও ইউক্রেনের আকাশে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় স্বতন্ত্র ডেলটা ডানার শাহেদ-১৩৬ ড্রোন উড়তে দেখা যায়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। শাহেদ-১৩৬ এক ধরনের আত্মঘাতী ড্রোন (কামিকাজে), যা সস্তা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।
ইরানি ড্রোনগুলোকে ‘জেরান-২’ হিসেবে রূপান্তর ও নতুন নাম দিতে সক্ষম হয়েছে রাশিয়া। এরপর সেগুলো পরিচালনায় গ্লোনাসের মতো দেশটির গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) সঙ্গে সমন্বয় করতে পেরেছে।
রাশিয়া বলছে, নতুন নাম দেওয়া, রূপান্তরিত এবং পুনরায় রং করা এসব ড্রোন তাদের নিজেদের এবং কোনোভাবেই ইরানের নয়। তবে মস্কোর এমন হালকা দাবি ধোপে টিকে না। কারণ, এসব ড্রোনের বেশির ভাগ যন্ত্রাংশই ইরানের তৈরি এমন ব্যাপক তথ্য-প্রমাণ মিলেছে।
কেন এই পথে হাঁটল ইরান?
আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাশিয়াকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে ইরান চুক্তির বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে কি না, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এমন প্রশ্ন উঠেছে। এরপর এখানে ইরানের কিছু স্বার্থ রয়েছে।
ইরানে বিভিন্ন ধরনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদিত হচ্ছে। যুদ্ধে এসব অস্ত্রের সক্ষমতার সত্যিকারের পরীক্ষা হয়। আর এখানে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করার কোনো সুযোগ নেই।
ইরানের প্রক্সি বাহিনীগুলো অতীতে এসব ড্রোনের কিছু মডেলের পরীক্ষা চালিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা অস্ত্র পাওয়া শিল্পায়নে সমৃদ্ধ একটি শক্তির বিরুদ্ধে যদি দেশটির অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। আর এই তথ্যসম্পদ কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংঘাতে নিজের অবস্থান মূল্যায়ন করতে পারবে ইরান।
তথ্য পর্যালোচনার পর পাওয়া ফলাফলের ভিত্তিতে ইরানের গবেষক ও অস্ত্রের নকশাকারীরা ভবিষ্যতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলো আরও উন্নত করতে পারবেন। তাঁরা সেগুলোকে আরও প্রাণঘাতী করে তৈরি করতে পারবেন।
কথিত ড্রোন চুক্তির আরেকটি কারণ হলো ইরানের বিমানবাহিনীর কাছে ২৪টি সর্বাধুনিক সুখোই সু-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রিতে রাজি হতে পারে রাশিয়া। ইরানের বিমান বাহিনীর কাছে পুরোনো মডেলের যুদ্ধবিমান রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মিগ-২৯–এর পুরোনো সংস্করণই সবচেয়ে ভালো।
রাশিয়ার প্রযুক্তি জ্ঞান, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং কারিগরি দক্ষতা ইরানের যুদ্ধবিমানের চাহিদা পূরণে দেশটির সামর্থ্য বাড়াতে পারে। এতে ভবিষ্যৎ সংঘাতে অন্তত টিকে থাকার একটি সুযোগ পাবে ইরান।
অন্যদিকে ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক ছাড়া ড্রোন খাতে তেমন বড় ধরনের বিনিয়োগ করেনি রাশিয়া। ফলে সস্তা ও কার্যকর ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আমদানি ছাড়া মস্কোর সামনে তেমন বিকল্প নেই।