এরদোয়ানের হার কি প্রবাসী তুর্কিদের আশা জাগাচ্ছে
তুরস্কে গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা, ইজমিরসহ ১৪টি বড় শহরে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দলের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছেন বিরোধীরা। এতে বিদেশে পাড়ি দেওয়া অনেক তুর্কি বেশ খুশি। কিন্তু এই নির্বাচনের ফল কি তাঁদের দেশে ফিরে যেতে উৎসাহিত করবে?
গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানের জয়ের পর বিরোধীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছিল। গত সপ্তাহের নির্বাচনে জয়ের পর বিরোধী নেতা অজগুর ওজেল সমর্থকদের বলেন, ‘তরুণদের মধ্যে যাঁরা দেশ ছাড়ার জন্য স্যুটকেস গুছিয়েছিলেন, তাঁরা এই জয়ের পর আরও একটি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
তুরস্কের আধুনিক ইতিহাসে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মেধাবী দেশ ছেড়ে গেছেন। তাঁদের অনেকে এসেছেন জার্মানিতে। তাঁদের একজন ৩৫ বছর বয়সী ওজগেচান ওজেরেন। তিন বছর ধরে তিনি জার্মানিতে বাস করছেন। একটি জার্মান কোম্পানিতে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন ওজেরেন। তুরস্কে গত সপ্তাহের নির্বাচনে যে ফল হয়েছে, এর জন্য তিনি ২২ বছর ধরে অপেক্ষা করেছেন বলে জানান। তবে ২২ বছরের প্রভাব ঠিক হতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন তিনি। তাই শিগগিরই তাঁর দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই বলে জানান ওজেরেন।
৩৫ বছর বয়সী আরেক তুর্কি এসরা ওগুন ফ্রাঙ্কফুর্টের একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি জার্মানিতে বাস করছেন। গত বছর এরদোয়ানের জয়ের পর জার্মানিতে জার্মান-তুর্কিদের উদ্যাপন দেখে হতাশ হয়েছিলেন তিনি। গত সপ্তাহের নির্বাচনের ফলে ওগুন কিছুটা আশান্বিত হলেও জার্মানিতে কাজের পরিবেশ তাঁর জন্য অনুকূল হওয়ায় অবসরে যাওয়ার আগে তুরস্কে ফিরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি। ওগুন বলেন, তাঁর কাছে জার্মানি এখন নতুন তুরস্ক হয়ে উঠেছে, কারণ জার্মানিতে তাঁর কয়েক ডজন তুর্কি বন্ধু রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস শুরু করা মানুষের মধ্যে অনেকের তুরস্কে ফিরে যাওয়ার কিছু সম্ভাবনা থাকলেও তুর্কি-আর্মেনীয় সাংবাদিক হায়কো বাগদাতের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর ফেরার জন্য শুধু নির্বাচনের ফল নয়, এর চেয়েও বেশি কিছু লাগবে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে অবমাননা করার অভিযোগ আনা হয়েছে হায়কো বাগদাতের বিরুদ্ধে। দেশে গেলে তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
২০১৭ সাল থেকে হায়কো বাগদাত জার্মানিতে বাস করছেন। বার্লিনে এখন তুরস্কের বিরোধী ঘরানার অনেক শিল্পী, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী থাকেন। তাঁদের সঙ্গে বাগদাতের ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনের ফলাফলের পর তিনি স্যুটকেস গোছানো শুরু না করলেও আগের যেকোনো নির্বাচনের ফলের চেয়ে এবারের ফল তাঁকে কিছুটা আশান্বিত করেছে।