রাফার কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে গেছে ইসরায়েলি ট্যাংক

ইসরায়েলি ট্যাংকফাইল ছবি: এএফপি

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) আদেশ উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের গাজার রাফায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো রাফার কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে যায় ইসরায়েলি ট্যাংক। প্রত্যক্ষদর্শীরা এ কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া রাফার পশ্চিমাঞ্চলেও ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এর আগে রোববার রাতে রাফায় নিরাপদ ঘোষিত অঞ্চলে শরণার্থী তাঁবুতে হত্যাযজ্ঞ চালায় ইসরায়েল। তাল আস-সুলতান এলাকায় বিমান হামলায় ২৩ নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধসহ কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের অনেকে জীবন্ত পুড়ে মারা যান। শিশুদের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। আইসিজের আদেশ মেনে রাফায় অভিযান বন্ধের আহ্বান জানায় জাতিসংঘের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ। আলজেরিয়ার আবেদনে এ নিয়ে গতকাল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকও আহ্বান করা হয়।

রাফায় তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, ‘বহু বেসামরিক নাগরিক নিহতের এ ঘটনায় আমি ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছি। এসব মানুষ প্রাণঘাতী এ সংঘাত থেকে বাঁচতে শুধু সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।’ জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। এ ভয়াবহতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’

কিন্তু আইসিজের আদেশ ও রোববারের হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় বৈশ্বিক নিন্দা উপেক্ষা করে রাফায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মধ্য রাফার আল-আওদা মসজিদের কাছে ইসরায়েলি ট্যাংকের উপস্থিতি দেখা গেছে।

ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো পশ্চিম রাফার আরও ভেতরে ঢুকে পড়েছে। কিছু ট্যাংক পশ্চিম রাফার জুরুব এলাকায় পাহাড়ি উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। সেখানে হামাসসহ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর লড়াই চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাফায় ইসরায়েলি বাহিনী দূরনিয়ন্ত্রিত সাঁজোয়া যান ব্যবহার করছে বলে মনে হচ্ছে। কিছু সাঁজোয়া যানের ভেতরে বা আশপাশে তাৎক্ষণিক কোনো সেনার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র।

এর আগে রাতভর রাফাজুড়ে বিমান হামলা ও ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করা হয় বলে বাসিন্দারা জানান। রাফার পশ্চিমাঞ্চলেও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হন। এ ছাড়া গতকাল সেখানে তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের ওপর আবারও হামলার খবর পাওয়া গেছে। এতে কমপক্ষে সাতজন নিহত হন।

৭২৩ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান এ যুদ্ধে গাজার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৪৫০ বার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ৭২৩ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯২৪ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব তথ্য দিয়েছে।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৩৬ হাজার ৯৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।