বোমাবর্ষণের সঙ্গে গাজায় ঢুকে হামলার প্রস্তুতি
গাজা সীমান্তে তিন লাখের বেশি ইসরায়েলি সেনা। পাঠানো হয়েছে অসংখ্য ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান।
টানা পাঁচ দিন বোমাবর্ষণের পর এবার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ঢুকে হামলা চালাতে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ জন্য গাজা সীমান্তে কয়েক লাখ সেনা মোতায়েন ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে তারা। যেকোনো সময় ইসরায়েলি বাহিনী এই ‘অভিযান’ শুরু করবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ট জানান, যেকোনো মুহূর্তে গাজায় স্থল অভিযান শুরু হবে। গাজা সীমান্তে মোতায়েন করা সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আকাশপথে (গাজা) অভিযান চালাচ্ছি। এবার স্থলপথেও অভিযান চালাব।’
ইওয়াভ গ্যালান্ট বলেন, হামাসের হামলার দ্বিতীয় দিনই গাজা সীমান্তবর্তী এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। পাল্টা অভিযান চলছে। এর মাত্রা সামনে আরও বাড়বে। হামাস পরিবর্তন চায়। তাদের চাওয়ামতো সেই পরিবর্তন হবে। গাজা আর আগের মতো থাকবে না।
এদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করতে সেনারা প্রস্তুত। সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস গতকাল বুধবার বলেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য গাজা সীমান্তে তিন লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
জোনাথন কনরিকাস বলেন, পদাতিক, সাঁজোয়া ও কামান নিয়ে সামরিক বাহিনীর পৃথক ব্রিগেড গাজা সীমান্তে পাঠানো হয়েছে। এসব বাহিনীর সঙ্গে রয়েছে তিন লাখ রিজার্ভ সেনা।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস আরও বলেন, সরকারের দেওয়া ‘মিশন’ পরিচালনা করতে সেনারা প্রস্তুত। যুদ্ধ শেষে যাতে হামাসের কোনো সামরিক সক্ষমতা না থাকে, তা নিশ্চিত করাই এই অভিযানের লক্ষ্য।
বিবিসির সাংবাদিক পল অ্যাডামস বলেন, অবিলম্বে জনবহুল গাজায় স্থলপথে সামরিক অভিযান শুরু করবে ইসরায়েল। দক্ষিণ ইসরায়েলে ইতিমধ্যে বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে অসংখ্য ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান।
যুদ্ধকালীন সরকার
এদিকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইসরায়েলে একটি জরুরি সরকার গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, বিরোধী জোটের নেতা বেনি গান্টজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্টকে নিয়ে জরুরি সরকারের অধীনে একটি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভাও গঠন করা হয়েছে। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের সব নির্দেশ আসবে এই মন্ত্রিসভা থেকে। তাঁদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য আরও কয়েকজন উপদেষ্টা থাকবেন। এ ছাড়া বিদ্যমান মন্ত্রিসভায় বিরোধী দল থেকে নতুন করে পাঁচজনকে রাখা হবে।
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র–গোলাবারুদ
ইসরায়েলকে প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। গত শনিবার ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলার পর পাল্টা অভিযান চালাতে ইসরায়েলকে বাড়তি সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুযায়ী, গাজায় পাল্টা অভিযানের জন্য গোলাবারুদের প্রথম চালান নিয়ে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ইসরায়েলে যায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একটি উড়োজাহাজ। এ ছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরি জেরার্ল্ড আর ফোর্ড ইসরায়েলের কাছে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলে সব ধরনের সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন। ইসরায়েলের নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামাস সদস্যরা যেভাবে হামলা চালিয়েছেন, তাকে সম্পূর্ণভাবে শয়তানের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।