যুদ্ধবিরতিতে বিলম্বের জন্য একে অপরকে দুষছে হামাস ও ইসরায়েল

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় পরিবারের অনেক সদস্যকেই হারিয়েছেন এই ফিলিস্তিনি। বেঁচে থাকা দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। ১২ অক্টোবর, গাজার রাফা শহরেছবি: এএফপি

কয়েক দিন ধরে আলোচনায় অগ্রগতির খবর এলেও এখনো একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হতে না পারার জন্য একে অপরকে দুষছে গাজার ফিলিস্তিনিদের সংগঠন হামাস ও ইসরায়েল।

গতকাল বুধবার হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েল আরও শর্ত আরোপ করেছে। তারা বলছে, ‘(সেনা) প্রত্যাহার, যুদ্ধবিরতি, কারাবন্দী এবং বাস্তুচ্যুতদের ফিরে আসা নিয়ে দখলদারেরা নতুন নতুন শর্ত আরোপ করছে। যার ফলে যে চুক্তিতে আগেই পৌঁছানো সম্ভব ছিল, সেখানে পৌঁছাতে এখন বিলম্ব হচ্ছে।’

অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এরই মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে—এমন শর্ত থেকে এখন পিছিয়ে যাচ্ছে হামাস।

এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাস মিথ্যা বলেই যাচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে যে সমঝোতায় ইতিমধ্যে পৌঁছানো গেছে, এখন তারা সেই প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে আসছে এবং আলোচনায় জটিলতা সৃষ্টি করেই যাচ্ছে।’

জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ইসরায়েল নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান নেতানিয়াহু।

কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এ আলোচনা শুরু হয়েছে।

গত মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, এক সপ্তাহ ধরে উল্লেখযোগ্য আলোচনার পর জিম্মি মুক্তির বিষয়ে পরামর্শ নিতে ইসরায়েলের প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাতার থেকে ইসরায়েলে ফিরে এসেছে।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী দুই আরব দেশ কাতার ও মিসর দুই সপ্তাহ ধরে একটি পর্যায়ক্রমিক চুক্তিতে পৌঁছাতে নিজেদের প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। একটি চুক্তিতে উপনীত হতে যেসব বিষয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তার একটি হচ্ছে ইসরায়েলের সেনা মোতায়েন ঘিরে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গতকাল বুধবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে কমান্ডারদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতেই রাখবে ইসরায়েল। সেখানে নিরপেক্ষ অঞ্চল (বাফার জোন) তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ পোস্ট বসানো হবে।

হামাস যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েল চাইছে, প্রথমে গাজায় হামাসের শাসনের অবসান। যাতে হামাস আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে না পারে।

আরও পড়ুন

গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধের সূচনা হয়। ইসরায়েলের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেদিন হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে। বন্দী করে নিয়ে যায় আরও ২৫১ জনকে।

সেদিন গাজায় পাল্টা নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৪৫ হাজার ৩০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই এক বা একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গাজার বেশির ভাগ এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপ।

আরও পড়ুন