ইসরায়েলের হুঁশিয়ারি
গাজায় বছরজুড়ে হামলা চলবে
ইংরেজি বর্ষবরণের সময়ও গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। পাল্টা জবাব দেয় হামাসের যোদ্ধারাও।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় চলতি বছরের পুরোটা সময় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েল। গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অনবরত হামলায় অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় ইতিমধ্যে প্রায় ২২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। ইংরেজি বর্ষবরণের শুরুতেও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
নববর্ষের বার্তায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি বলেন, সামনের ‘দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের’ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তিন লাখ রিজার্ভ সেনার কিছু সংখ্যক যুদ্ধ থেকে সাময়িক বিরতি পাবেন।
হাগারি বলেন, সেনাবাহিনীকে ‘আগাম পরিকল্পনা করতে হবে, বুঝতে হবে যে, বছরজুড়ে অতিরিক্ত কাজ এবং যুদ্ধের জন্য আমাদের প্রয়োজন হবে।’
এদিকে গতকাল সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৫৬ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২১ হাজার ৯৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৭ হাজার ৬৯৭ জন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন ৭ হাজারের মতো। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হওয়া বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে তারা আটকা পড়ে আছেন।
পাল্টাপাল্টি হামলায় শুরু নতুন বছর
গত রোববার দিবাগত রাতে বর্ষবরণের সময়ও গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। পাল্টা জবাব দেয় হামাসের যোদ্ধারাও। গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
রোববার মধ্যরাতে বর্ষবরণের সময় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল ও তেল আবিব শহরকে লক্ষ্য করে গাজা থেকে কয়েকটি রকেট ছোড়া হয়। দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম হামলাটি হয়। এর এক মিনিট পর তেল আবিবকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।
■ ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
■ গাজা থেকে ইসরায়েলের কিছু রিজার্ভ সেনা প্রত্যাহার যুদ্ধের নতুন ধাপ বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনার সময় তেল আবিবে বিমান হামলাজনিত সতর্কসংকেত বাজানো হয়। ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে রকেটগুলো ভূপাতিত করা হয়।
মধ্যরাতে নববর্ষ উদ্যাপন করতে অনেক মানুষ রাস্তায় জড়ো হয়েছিলেন। ঘটনার সময় সতর্কসংকেত পেয়ে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। কেউ কেউ আবার উৎসব চালিয়ে যেতে থাকেন।
হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ওই ভিডিওতে ইসরায়েলে হামলার দায় স্বীকার করেছে তারা। তারা আরও বলেছে, বেসামরিক লোকজনের ওপর ইসরায়েল যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তার বদলা নিতে এম ৯০ রকেট ব্যবহার করে এ হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার ৮৫ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাঁদের একজন ২০ বছর বয়সী হামদান আবু আরব। তাঁর আশা, ২০২৪ সাল তুলনামূলক ভালো যাবে।
স্মৃতিচারণা করে হামদান বলেন, ‘আমরা সাধারণত বছরের শেষ দিন বাইরে ঘুরতে বের হতাম এবং আনন্দ-উল্লাস করতাম। কিন্তু এবারের নববর্ষের প্রাক্কালে এখানে কেবলই ক্ষেপণাস্ত্র আর মানুষের দেহাবশেষ।’
যুদ্ধের নতুন ধাপ
গাজা থেকে ইসরায়েলের কিছু রিজার্ভ সেনা সরিয়ে নেওয়া যুদ্ধের নতুন ধাপের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। গতকাল দেশটির কর্মকর্তারা বলেন, সামরিক বাহিনী এই মাসে গাজার অভ্যন্তরে সেনা সংখ্যা কমিয়ে আনবে। কয়েক মাস দীর্ঘ যুদ্ধের নতুন ধাপ শুরু করা হবে। এতে স্থানীয়ভাবে আরও সুনির্দিষ্ট ‘নির্মূল’ অভিযান চালানো হবে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, সেনা কমিয়ে আনার ফলে রিজার্ভ সেনাদের কিছু অংশ বেসামরিক জীবনে ফিরতে পারবেন। এতে এতে ইসরায়েলের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে। এ ছাড়া উত্তরে লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাত বিস্তৃত হলে গাজা থেকে সরিয়ে আনা সেনাদের সেখানে মোতায়েন করা হবে।
কয়েক দিন ধরে লেবানন সীমান্ত ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা বেড়েছে। ইসরায়েল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা পিছু না হটলে লেবাননে পুরোদমে যুদ্ধ আসন্ন।
গাজা যুদ্ধের জন্য তিন লাখ রিজার্ভ সেনা তলব করে ইসরায়েল সরকার। এটি দেশটির শ্রমশক্তির ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। তবে অনেককে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। অবশ্য সরকারি সূত্রগুলো বলছে, এখনো দুই থেকে আড়াই লাখ রিজার্ভ সেনা দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় অনুপস্থিত।
অক্টোবরের শেষ দিকে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে হামাসসহ গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোর যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে তারা। স্থল অভিযানে ১৭২ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হন। তবে তাঁদের মধ্যে ২৯ জনই নিজেদের বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন বলে ইসরায়েল স্বীকার করেছে।