কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় ৫৭ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং বাকি একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আমিরাতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আমিরাতি নিউজ এজেন্সি (ডব্লিউএএম) সোমবার এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ডব্লিউএএমের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ব্যক্তিরা তাঁদের নিজ দেশের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিলেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন যে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশ কয়েকটি সড়কে বড় ধরনের বিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুমতি ছাড়া যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ওই বিক্ষোভ করেন বলে খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ওই বিক্ষোভের পরদিন শনিবার (২০ জুলাই) আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল বিবৃতি দিয়ে প্রবাসীদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী সব প্রবাসী বাংলাদেশিকে স্থানীয় আইন ও বিধিবিধান মেনে চলতে অনুরোধ করা হচ্ছে। সবার জেনে রাখা ভালো, এই দেশের আইন অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষগুলোর পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ করা বা স্লোগান দেওয়া নিষিদ্ধ। জনগণের মধ্যে অস্থিরতা, আতঙ্ক বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো কাজ করা, গুজব বা অপপ্রচার চালানো কিংবা এই ধরনের কোনো বক্তব্য, ছবি বা ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা এই দেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কেউ উল্লিখিত কাজগুলো করলে তাঁকে কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। তাঁর ভিসা বাতিল হয়ে যেতে পারে, জেল-জরিমানা হতে পারে, তাঁকে আমিরাত থেকে ফেরত পাঠানো হতে পারে বা ভবিষ্যতে তাঁর আমিরাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
সোমবার এক আলাদা বিবৃতিতে আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, আমিরাতে ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন। তাঁরা শান্তিপ্রিয় ও কঠিন পরিশ্রমী। তাই যেসব মুষ্টিমেয় প্রবাসী বাংলাদেশি বেআইনি কাজ করেছেন, তাঁরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন না। প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমিরাতকে নিজেদের দ্বিতীয় আবাস মনে করেন। তাঁরা স্থানীয় আইন, বিধিবিধান, প্রথার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল।
ইউএইর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আমিরাতে বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক বসবাস করেন। পাকিস্তান ও ভারতের পর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশের।