ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের তোপ সামলানোই হবে ইরানের নতুন নেতৃত্বের বড় পরীক্ষা
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু হলো এমন এক সময়ে, যখন দেশটি ভেতরে ও বাইরে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে টানাপোড়েন ছাড়াও দেশের ভেতরে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষার চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে তেহরান। বর্তমানে ৮৫ বছর বয়সী ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উত্তরসূরি কে হবেন, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। রাইসিই খামেনির উত্তরসূরি হবেন বলে মনে করা হচ্ছিল।
ইরানের শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রক্ষমতায় ধর্মীয় নেতা, রাজনীতিবিদ ও সেনাবাহিনীর প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি আছেন সবার ঊর্ধ্বে। প্রেসিডেন্ট তাঁর সায় নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির খুবই অনুগত হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
সর্বোচ্চ নেতার সমর্থনপুষ্ট হয়ে ২০২১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হন ইব্রাহিম রাইসি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাঁকে খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের একজন হিসেবে উল্লেখ করা হতো। তাঁর মৃত্যুতে এই পদের জন্য খামেনির ছেলে মোজতবা খামেনির পথ পরিষ্কার হতে পারে। অবশ্য সর্বোচ্চ নেতার উত্তরসূরি কে হবেন, তা ঠিক করবে দেশটির ৮৮ সদস্যের ‘বিশেষজ্ঞদের পর্ষদ’।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, বিশেষত ইসরায়েল ও দেশটির মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে সামনে এগিয়ে যাওয়া হবে তেহরানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়।
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট রাইসির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোল্লাহিয়ানের মৃত্যুও ইরানের জন্য বিরাট ধাক্কা হয়ে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে আসা উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আগেরি কানিকে এখন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে দেনদরবার করতে হবে।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান দায়িত্বরত কোনো প্রেসিডেন্টকে হারায়নি। তবে এমন পরিস্থিতি হলে কে ওই পদে আসবেন, সে বিষয়ে দেশটিতে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে দেশটির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ গার্ডিয়ান কাউন্সিল। সাবেক ব্যাংকার মোখবার এর আগে খুজেস্তান প্রদেশের ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন ৫০ দিনের মধ্যে ইরানে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। তাতে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা এবং তাঁর অনুসারীরা যোগ্য কাউকে বেছে নেওয়ার জন্য খুব বেশি সময় পাবেন না।
ইরানের নতুন নেতৃত্বের জন্য এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে দেশের ভিন্নমতাবলম্বীদের সামলানো। সেই সঙ্গে পশ্চিমাদের সঙ্গে বৈরতা সামলে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখাটাও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ইরানের দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। গত এপ্রিলে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্য দিয়ে এই সম্পর্কে উত্তেজনা চরম আকারে পৌঁছায়। এ ছাড়া ইরান–সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুতিদের ইসরায়েলবিরোধী ভূমিকা কেমন হবে, সে বিষয়টিও ইরানের নতুন নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করবে।
তবে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টকে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটা নিতে হবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে। ৯ মে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল খারাজি বলেন, ইসরায়েল হামলা চালালে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির গতিপথ পাল্টে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে হাঁটবে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি নিয়ে হালকা কথাবার্তা না বলার জন্য ইরানকে সতর্ক করেছেন। এ ধরনের কথাবার্তা বিরক্তিকর বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।