কায়রো শান্তি সম্মেলনে গাজায় সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানাতে ব্যর্থ নেতারা
কোনো ঘোষণা ছাড়াই শেষ হলো কায়রো শান্তি সম্মেলন। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল মিসর। সম্মেলনে অংশ নেওয়া আরব ও ইউরোপীয় নেতারা সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানানোর বিষয়ে একমত হতে পারেননি।
তবে গতকাল শনিবারের এ সম্মেলন থেকে দুই সপ্তাহ ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন আরব নেতারা। কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সহিংসতা বন্ধে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন করে প্রচেষ্টা শুরুর দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাননি ইউরোপের দেশগুলোর নেতারা। অবশ্য তাঁরা বলেছেন, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সেখানে ত্রাণ পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
ইতালি, স্পেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিরা থাকলেও ইসরায়েল এবং দেশটির প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বড় দেশগুলোর নেতারা অনুপস্থিত থাকায় এ সম্মেলন থেকে প্রত্যাশাও খুব বেশি ছিল না।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা বন্ধ ও সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর দাবিতে আয়োজিত এ সম্মেলনে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বর হামলার ঘটনায় বিশ্বের নীরবতার নিন্দা জানান। এ ছাড়া দ্বন্দ্ব নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ফিলিস্তিনিদের মিসরের সিনাই অঞ্চলে সরে যেতে ইসরায়েলের নির্দেশের প্রতিবাদ করেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি। তিনি বলেন, তাদের সরিয়ে নেওয়া ফিলিস্তিনি সমস্যার সমাধান নয়। এর সমাধান ন্যায়বিচার এবং ফিলিস্তিনিদের বৈধ অধিকার ও স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ দেওয়া।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা যাবে না বা তাঁদের ভূখণ্ড থেকে সরানো যাবে না। মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘আমরা সরব না।’
সম্মেলনে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। এ সম্মেলনের আগেই মিসর জানিয়েছিল, এতে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক উপস্থিত থাকবেন না। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও থাকবেন না।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি সম্মেলনে ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানান। সম্মেলনে উপস্থিত নেতাদের ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের দ্রুত অবসান ঘটাতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানান জাতিসংঘ মহাসচিব।
দ্রুত এ সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানান তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। সম্মেলনে অংশ নেওয়া সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান গাজায় সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব পাস করাতে পারেনি এ পরিষদ।
সম্মেলনে আরব ও মুসলিম দেশগুলো অবিলম্বে ইসরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও পশ্চিমা দেশগুলো মূলত গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেন, এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল ‘একে অপরের কথা শোনা’।