ইসরায়েল–ইরানের পাল্টাপাল্টি হুমকিতে বড় সংঘাতের শঙ্কা
ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েল সরকার ও দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের হামলার অবশ্যই জবাব দেবে তারা। যদিও মিত্রদেশগুলো পাল্টা হামলা না চালাতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। ইরানও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলছে, ইরানের ওপর আবার কোনো হামলা হলে ইসরায়েলকে পস্তাতে হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমনিতে ফিলিস্তিনের গাজায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে। তার ওপর ইরানে পাল্টা হামলা চালালে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। দেখা দিতে পারে বড় ধরনের সংঘাত।
ইরানের হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল বুধবারও বৈঠক করেছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। বৈঠকে ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো। তবে ইসরায়েল সরাসরি ইরানের ভূখণ্ডে হামলা করবে, নাকি সিরিয়া, লেবানন, ইরাক বা ইয়েমেনে ইরানের মিত্রদের ওপর হামলা করবে—এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।
ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ইসরায়েল সফর করেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বায়েরবক। ইসরায়েলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পর ডেভিড ক্যামেরন সাংবাদিকদের বলেন, ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান হারজি হালেভি গতকাল বলেন, ইরানের হামলার অবশ্যই জবাব দেওয়া হবে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইরানকে ‘ছেড়ে দেওয়া’ হবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং এ বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, ইরানে সীমিত আকারে হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যের বরাতে এসব সূত্র বলছে, ইরানের অভ্যন্তরে ছোট ও সীমিত আকারে হামলা চালানোর চিন্তাভাবনা করছে ইসরায়েল। দেশটি মনে করছে, একধরনের সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেই ইরানের এই হামলার জবাব দেওয়া দরকার।
বাইডেন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা বলেন, হামলার পরিকল্পনা বা সময় সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে এখনো কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, হামলার আগে এ বিষয়ে ওয়াশিংটনকে জানানো হবে।
তবে ইরানের ওপর ইসরায়েলের নতুন করে যেকোনো হামলার আরও কঠোর জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। গতকাল ইরানের জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এক আয়োজনে তিনি বলেন, ইসরায়েল যদি আর ন্যূনতম কোনো আগ্রাসন চালায়, তাহলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আব্দোলরহিম মৌসাভি বলেন, ইরানের স্বার্থের ওপর যেকোনো আগ্রাসনের অবশ্যই এমন জবাব দেওয়া হবে, যার জন্য পরে ইসরায়েলকে পস্তাতে হবে।
চলতি মাসের প্রথম দিন সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরান দূতাবাসে হামলা চালায় ইসরায়েল। সেই হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) একজন শীর্ষ জেনারেলসহ সাতজন নিহত হন। এর জবাবে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে গত শনিবার ইসরায়েলে হামলা চালায় ইরান।
নতুন নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরান
ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ইরানের ওপর কোনো হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দেবে না ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে পশ্চিমা এবং অনেক আরব দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রও সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অবশ্য ওয়াশিংটন জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচি, আইআরজিসি ও দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দেবে তারা।
ইউরোপের ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ গতকাল বলেন, ইরানের ওপর নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলোচনা চলছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান–সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং রাশিয়ায় ইরানের ড্রোনসহ অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহের ওপরও নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও ইরানের ওপর আরও কঠোর ও সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭–এর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলে ড্রোন হামলা হিজবুল্লাহর
ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান–সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার বিস্ফোরকবোঝাই দুটি ড্রোন দিয়ে হিজবুল্লাহ এ হামলা চালায়। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, লেবানন থেকে দুটি সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে উত্তর ইসরায়েলের বেইত হিল্লেল এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। সামরিক বাহিনী ও চিকিৎসকদের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা সংকটজনক।
ইসরায়েলে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে হিজবুল্লাহ। গোষ্ঠীটি গতকাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আত্মঘাতী ড্রোন দিয়ে দুই দফায় ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছেন হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম ও ইসরায়েলি সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়।