ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা: আসলে কী হলো, কী হতে পারে

শনিবার ভোররাতে ইরানে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর এক পাইলট। ছবিটি প্রকাশ করেছে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)ছবি : দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

ইরানে হামলা চালিয়ে দেশটির চারজন সেনাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। হামলার পর ইসরায়েল বলেছে, সামরিক স্থাপনাই ছিল তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু। আর ‘ইরান ও তাদের সহযোগীদের’ হামলার জবাব দিতেই তারা এ হামলা করেছে।

আর ইরান বলেছে, তারা গাজা, লেবানন ও তাদের নিজেদের লোকজনের ওপর ইসরায়েলের হামলা প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবে।

এই প্রথম ইরানে হামলার পর ইসরায়েল প্রকাশ্যে এর দায়িত্ব স্বীকার করল।

আরও পড়ুন

ইরানে কী হয়েছিল, কখন হয়েছিল

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইলোভ গ্যালান্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেন বলে জানা গেছে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত শুক্রবারই ইরানকে এ হামলা বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এরপর গতকাল শনিবার তেহরানের স্থানীয় সময় দিবাগত রাত দুইটায় ইসরায়েল হামলা শুরু করে।

তিন ঘণ্টা পর দ্বিতীয় দফায় ইলাম ও খুজিস্তানে হামলা চালায়। সকাল ৬টার দিকে ইসরায়েল বলে, তাদের হামলা ‘সমাপ্ত’ হয়েছে। আর এ হামলায় তাদের ‘লক্ষ্য অর্জিত’ হয়েছে।

আরও পড়ুন

ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র পরে বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির মাধ্যমগুলোর ওপর হামলা হয়েছে। দেশটির ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ও বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও ছিল তাদের হামলার লক্ষ্যস্থল।

ইরানের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়, এ হামলায় ইরানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত চার সেনা নিহত হন। তবে তাঁরা কোথায় নিহত হয়েছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেনি।

হামলার সময় ইরানের বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, তবে পরে সকাল নয়টার দিকে তা আবার চালু হয়।

হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেন, ইরানের এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত ছিল না। তবে হামলার পর এ ব্যাপারে মার্কিস প্রেসিডেন্টকে জানানো হয়।

ইসরায়েল বলেছে, যে যুদ্ধবিমানগুলো হামলা পরিচালনা করেছে, সেগুলো তাদের ঘাঁটিতে নিরাপদে ফিরে এসেছে।

ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর বলেছে, তেহরান, ইলাম ও খুজিস্তানে হামলা হয়ছে। তবে সেগুলোর যথাযথ জবাব দেওয়া হয়েছে। আর এতে ক্ষয়ক্ষিতও খুব কম।
আর ইসরায়েল বলেছে, তারা ২০টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।

আরও পড়ুন

এ হামলা কেন করল ইসরায়েল

ইসরায়েল আগে থেকেই বলে আসছিল, ‘ইরান ও তার মিত্রদের’ হামলার জবাব দিতে হামলা করা হবে।

এ হামলার সময় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারির রেকর্ড করা বিবৃতিতে বলেন, ‘ইরানের সরকার এবং তাদের সহযোগীরা ৭ অক্টোবরের পর থেকে ক্রমাগতভাবে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব হামলার জবাব দেওয়া অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে ইসরায়েলের।’

গাজা ও লেবাননে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অক্টোবর মাসের শুরুতে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান।

আরও পড়ুন

ইরানের জনগণের প্রতিক্রিয়া

এ হামলার সময় কিছু মানুষ তো ঘুমিয়েই ছিলেন। কিন্তু রাত দুইটা থেকে বিস্ফোরণের ক্রমাগত শব্দে লাখ লাখ মানুষ শঙ্কায় জেগে থাকেন। ভিডিও ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া নানা পোস্টে দেখা যায়, কী ঘটছে তা জানতে উদ্‌গ্রীব মানুষ।

তেহরানের ৩২ বছর বয়সী যুবক আলী আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটা অপ্রত্যাশিত। কিন্তু এটা খুব ভীতিকর।’

আরও পড়ুন

ইরান যা বলল

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলের এ হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদের ‘চূড়ান্ত’ লঙ্ঘন।

ইরান জানায়, বহিঃশক্তির এই আগ্রাসী হামলার জবাব ইরান দেবেই। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় ইরানের মানুষের সব সক্ষমতা ব্যবহারে জোর দিয়েছে ইরান। এর পাশাপাশি আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় ইরান। এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে প্রতিটি দেশের নিজস্ব ও সামগ্রিক স্বার্থ ব্যবহারের বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ইরান।

আরও পড়ুন

ইরান কি প্রতিশোধ নেবে

বিশ্লেষকেরা বলছেন, গতকালের হামলায় ক্ষতির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। আর তাই এ হামলার দ্রুত জবাব না দেওয়ার জন্য একধরনের ‘যুক্তিসংগত অস্বীকৃতি’ তৈরি হয়েছে ইরানের পক্ষে।

সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এলিজা ম্যাগনিয়ার বলেন, সামরিক বাহিনীর চার সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার ফলে এর জবাব দেওয়ার একটি পথ সৃষ্টি হয়েছে।

আর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তো বলেই দিয়েছে, এ হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। তবে এই পাল্টা হামলার ধরন ও সময় কখন হবে, তা এখনো অস্পষ্ট।

আরও পড়ুন