২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

লেবাননে ইসরায়েলের হামলা বাইডেনের সতর্কবার্তার অকার্যকারিতাই ফুটিয়ে তুলেছে

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত এলাকায় হামলা চালায় ইসরায়েলছবি: রয়টার্স

বছরখানেক ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে ফিলিস্তিনের গাজায় চলা যুদ্ধের দামামায় লাগাম টানা। সেই সঙ্গে এ যুদ্ধ যাতে সর্বাত্মক আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ না নেয়, তা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে নানা সময় ইসরায়েলের প্রতি সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ বাকি। এ সময়ে বাইডেন তাঁর মেয়াদের সর্বশেষ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। একই সময় লেবাননে বড় পরিসরে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এসব হামলায় কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছেন। দৃশ্যত, এ হামলা বাইডেনের সতর্কবার্তার অকার্যকারিতাকেই তুলে ধরেছে।

জো বাইডেন গতকাল সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে ‘উত্তেজনা প্রশমনের’ লক্ষ্য নিয়ে আলোচনায় সমন্বয়ের কাজ করছে।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, বাইডেন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে আরও সংঘাত ছড়িয়ে পড়া রোধে ‘সুনির্দিষ্ট ধারনা’ উপস্থাপন করেছে। এটা অবশ্যই কূটনৈতিক উপায়ে সংকট সমাধানের পথকে নির্দেশ করেছে।

কিন্তু পরিস্থিতি খুব দ্রুতই মার্কিন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে গেছে। গত সপ্তাহে যখন ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে লেবাননজুড়ে একের পর এক পেজার বিস্ফোরিত হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, এ জন্য ইসরায়েল সরকারকে ব্যাপকভাবে দায়ী করার পেছনে তাঁদের কাছে কোনো পূর্বাভাস ছিল না। শান্ত থাকতে বলেছিল ওয়াশিংটন।

এরপর খুব দ্রুততার সঙ্গেই লেবাননে হামলা শুরু করল ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল জানানো হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় লেবাননে হিজবুল্লাহর ১ হাজার লক্ষ্যে হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের কর্তৃপক্ষ জানায়, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৯২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৫টি শিশুও রয়েছে।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর বছর ঘুরতে চলেছে। এ যুদ্ধের উত্তাপ ‘আঞ্চলিক যুদ্ধের’ পর্যায়ে না ছড়ানোর বিষয়ে সতর্কবার্তা আমলে না নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, উত্তরের প্রতিবেশী লেবাননের সঙ্গে ‘নিরাপত্তা ভারসাম্যে’ বদল আনাই তাঁর দেশের লক্ষ্য।

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর লেবাননে জোরাল সামরিক অভিযান শুরু করল ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের সঙ্গে বন্দিমুক্তির বিষয়ে বিরোধ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে নেতানিয়াহু গাজা–মিসর সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতির ওপরও জোর দিয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের যুক্তরাষ্ট্র–কর্মসূচির পরিচালক মাইকেল হান্না বলেন, গাজায় যাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো যায়, সে জন্য মার্কিন কূটনীতিকেরা লেবাননে শান্তি বজায় রাখতে চেষ্টা করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন এক জটিল সময় পার করছে। আগামী ৫ নভেম্বর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এর আগে জো বাইডেনের রাজনৈতিক উত্তরসূরি কমলা হ্যারিস দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কঠিন নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

এমন একটি সময়ে বাইডেন–কমলা সর্বাত্মক যুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে আগ্রহী হবেন। যদিও খুব কম মানুষ বিশ্বাস করেন যে নির্বাচনের এত কাছাকাছি এসে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকায় মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া কোনো পদক্ষেপ নেবে।

এ বিষয়ে মাইকেল হান্না বলেন, এটা অনুমান করা খুব কঠিন কিছু হবে না যে লেবাননে কখন অভিযান সম্প্রসারণ করা হবে, সেই বিষয়ে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জি ভূমিকা রাখবে।

ইরাক ও তুরস্কে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস জেফরি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা সহজাতভাবে যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করেছেন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মতো নেতানিয়াহুও তাঁর দেশের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন।

ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া সাবেক কূটনীতিক জেমস জেফরি এখন ওয়াশিংটনে উইলসন সেন্টারে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে রয়েছি। ২০ বছর ধরেই এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি।’

জেমস জেফরি আরও বলেন, ইরান এখন কিছুটা পশ্চাৎপদ অবস্থানে রয়েছে। অন্তত এ মুহূর্তের জন্য অন্যতম প্রধান মিত্র (প্রক্সি) হামাসকে হারিয়েছে। আরেক মিত্র হিজবুল্লাহ চাপে রয়েছে।

ইসরায়েলি হামলার মুখে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ছাড়ছেন হাজারো মানুষ
ছবি: এপি

গাজায় বেসামরিক মানুষজন নির্বিচারে নিহত হওয়ার ঘটনায় বরাবর উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন জো বাইডেন। তবে এত কিছুর পরও ইসরায়েলকে মার্কিন সহায়তা দেওয়া বন্ধ হয়নি। এখনো বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে ইসরায়েলকে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন গতকাল বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সেনা পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। সংঘাত আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে এটা করবে তারা।

ইতিমধ্যে, ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েল বৃহত্তর সংঘাত চাইছে। গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা যাবে, এমন আশ্বাসের কারণে তেহরান সংযম দেখিয়েছে।

মাসুদ পেজেশকিয়ান আরও বলেন, ‘কিন্তু আমরা কখনোই সেই অধরা শান্তিতে পৌঁছাতে পারিনি।’