রাফায় সেনা অভিযান না চালানোর অর্থ ইসরায়েলের পরাজয়: নেতানিয়াহু
ফিলিস্তিনের গাজার রাফা এলাকায় সেনা অভিযান চালানোর বিষয়ে আবারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, রাফায় সেনা অভিযান না চালাতে সমালোচকদের অনেকে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। তাঁরা আসলে ইসরায়েলকে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজয় মেনে নিতে বলছেন।
শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানো ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলে এর আগেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি নতুন করে ইঙ্গিত দিলেন—আন্তর্জাতিক চাপ বা নতুন জিম্মি বিনিময় চুক্তির তোয়াক্কা না করেই রাফায় প্রবেশ করবেন ইসরায়েলি সেনারা।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। দেশটি থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করেন হামাস যোদ্ধারা। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত ২৮ হাজার ৮৫৮ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
গত চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে গাজার প্রায় সব অঞ্চলে স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বাকি আছে শুধু সর্বদক্ষিণে মিসর সীমান্তবর্তী রাফা। ইসরায়েলের হামলার মুখে প্রাণ বাঁচাতে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন উপত্যকাটির প্রায় ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি। খাবার, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে সেখানে চরম মানবেতরভাবে জীবন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
রাফায় অভিযান চালালে চরম ‘বিপর্যয়কর’ এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। এ অভিযান না চালাতে ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। তবে শনিবার দেওয়া বক্তব্যে নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরা যদি এটা (হামাস নির্মূল) অর্জন করেও ফেলি, তারপরও রাফায় প্রবেশ করব।’
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরোধিতা করে বক্তব্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরায়েল যত দিন আমার নেতৃত্বে থাকবে, তত দিন আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একতরফা স্বীকৃতির তীব্র বিরোধিতা করে যাব। ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের পরও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে সন্ত্রাসবাদের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। আর এটা ভবিষ্যতের কোনো শান্তি চুক্তির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’
নেতানিয়াহু এমন সময়ে এ বক্তব্য দিলেন, যখন তেল আবিবে চলছে ইসরায়েলিদের তুমুল বিক্ষোভ। তাঁদের ভাষ্য, হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা না করে তাঁদের ত্যাগ করেছে নেতানিয়াহু সরকার। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের আলোচনা আহ্বানও জানানো হয় বিক্ষোভে।
সবশেষ গত নভেম্বরে গাজায় সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইসরায়েল ও হামাস। সে সময় বেশ কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর নতুন করে জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে যেতে সম্প্রতি মিসরের রাজধানী কায়রোয় বৈঠক বসে। তবে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।