‘মামা, আমি মরতে চাই না’
আবদেলহাদি আলিজলা পরিবারের কাছ থেকে শেষমেশ যে খুদে বার্তাগুলো পেয়েছিলেন, তাঁর মধ্যে একটি লিখেছিল ১০ বছরের ভাগনি আয়া। লিখেছিল, ‘প্রিয় মামা, আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ এর সঙ্গে ছিল কান্নার একটি ইমোজি ও ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার ধ্বংসস্তূপের সদ্য তোলা কিছু ছবি।
আর সর্বশেষ যে খুদে বার্তাটি পেয়েছেন, ‘সেখানে লেখা ছিল, মামা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি মরতে চাই না। তুমি যদি আমার পাশে থাকতে।
চার দিন আগে গত বৃহস্পতিবার শেষ এই খুদে বার্তাটি এসেছিল। এর আগে মামা-ভাগনির প্রতিদিনই বার্তা আদান-প্রদান চলত। আলিজলা তাঁর পরিবার নিয়ে সুইডেনে থাকেন। সেখান থেকে ফোনে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের (মামা–ভাগনি) সম্পর্কটা খুব মধুর।’
আয়া আলিজলার বোনের মেয়ে। আয়া ছবি আঁকতে, ফুটবল খেলতে পছন্দ করে। তারা পুরো পরিবার গাজা সিটিতে থাকে। কিন্তু এখন তারা কোথায় কোনো ধারণাই নেই আলিজলার। এই বোন ছাড়াও গাজায় আলিজলার আরও তিনি সহোদর ও তাঁদের সন্তানেরা থাকেন। কিন্তু এখন কারও খোঁজ নেই।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলটিকে ‘পুরোপুরি অবরোধ’ ঘোষণা করে। পাশাপাশি হামাসের হামলার জবাবে সেখানকার বিদ্যুৎ, খাদ্য, জ্বালানি এবং পানির সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়।
ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজার টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে ইন্টারনেট ও টেলিফোন সংযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
আলিজলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই গাজা সিটিতে থাকেন। এখন তাঁরা কোথায় বা আদৌ ঠিক আছে কি না, কিছুই জানি না। প্রতি দিন অনেকবার তাঁদের ফোনে কল করি, কিন্তু কাজ হয় না। সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।’
হামাসের হামলা শুরুর দিনই গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল। এর পর থেকে টানা চলে আসছে পাল্টাপাল্টি হামলা। ইসরায়েলের বোমার আঘাতে গাজায় ২ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। অপর দিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ।
গাজায় নিখোঁজ এক হাজারের বেশি মানুষ
গাজায় বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে এখন এক হাজারের বেশি মানুষ চাপা পড়ে আছেন। ফিলিস্তিনির বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী গতকাল রোববার এ তথ্য জানায়। আজ সোমবার সকালে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াদ আল-বোজোমও নিখোঁজের এই সংখ্যাটি নিশ্চিত করেছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েল ও গাজার মধ্যকার সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ৭৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৯ হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্য ১১ জন সাংবাদিক রয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সিন্ডিকেট।
এদিকে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পশ্চিম তীরে ৫৮ জন নিহত ও ১ হাজার ২৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।