গাজায় এক দিনে নিহত ৭০ ফিলিস্তিনি, ‘সর্বশেষ সতর্কতা’ জারি ইসরায়েলের
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আজ বৃহস্পতিবারও জোরালো হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। চালানো হচ্ছে স্থল অভিযান। এর আগে এক বিবৃতিতে গাজা থেকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা ও হামাসকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের প্রতি ‘সর্বশেষ সতর্কতা’ জারি করেছে ইসরায়েল।
আল-জাজিরা বলছে, গাজাজুড়ে গতকাল বুধবার এক দিনে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার থেকে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় আবারও হামলা জোরদার করে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে সেখানে নিহত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৪৩৬–এ। এর মধ্যে ১৮৩টি শিশু। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য এটা।
গতকাল গাজায় স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। বলা হয়, নিরাপত্তাব্যবস্থা বিস্তৃত করা এবং গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে আংশিক বাফার জোন প্রতিষ্ঠার জন্য মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় স্থল অভিযান আবারও শুরু করা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখতে বিদেশি সরকারগুলোর আহ্বান অমান্য করে আকাশ ও স্থলপথে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এর ফলে গাজাবাসী আবারও ধ্বংসস্তূপে প্রিয়জনের মরদেহ খোঁজার মতো করুণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে গত জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে।
গাজা নগরীতে কংক্রিটের স্তূপ থেকে এক শিশুর মরদেহ সরানোর চেষ্টা করছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমরা খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছি।’
‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাগুলো ছেড়ে যেতে বেসামরিক গাজাবাসীকে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের শিশুদের নিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের সড়কগুলোয় ভিড় জমান।
রাফায় রেডক্রসের হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা ফ্রেড ওলা বলেন, গাজায় নতুন করে হামলা শুরুর ঘটনা গত দুই মাসের আপেক্ষিক শান্তিকে ভেস্তে দিয়েছে।
তিনি যোগ করেন, ‘এখন আমরা বাতাসে আতঙ্ক অনুভব করছি। আমরা যাঁদের সেবা দিচ্ছি, তাঁদের চোখেমুখে ব্যাথা আর ধ্বংসের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি।’
গাজার বাসিন্দাদের উদ্দেশে দেওয়া সতর্কতামূলক ভিডিওতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেন, ‘এটাই সর্বশেষ সতর্কবার্তা।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পরামর্শ মেনে নিন। জিম্মিদের ফিরিয়ে দিন। আর হামাসকে সরিয়ে (ক্ষমতা থেকে) সরিয়ে দিন। যাঁরা গাজা ছেড়ে স্বেচ্ছায় বিশ্বের অন্যত্র চলে যেতে চান, সেটাসহ আরও অনেক বিকল্প আপনাদের জন্য উন্মুক্ত হবে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় হামাস। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। ৫৮ জন এখনো গাজায় জিম্মি আছেন। আর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, জিম্মি অবস্থায় ৩৪ জন মারা গেছেন।
উল্লেখ্য, গতকাল এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর গত সোমবার দুপুর নাগাদ নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৫৭৭। গতকাল দুপুর নাগাদ এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৫৪৭। সে হিসাবে গাজায় দুই দিনে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন প্রায় এক হাজার বাসিন্দা। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান ও ড্রোন হামলায় ৯৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে এএফপির আজকের প্রতিবেদনে নিহত মানুষের সংখ্যা ৪০০–এর বেশি বলে জানানো হয়।