আল শিফা হাসপাতালকে ‘মৃত্যুপুরী’ বলল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানবিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত প্রতিনিধি দল গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে আল শিফা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। সেখানে গোলা হামলা ও গুলির চিহ্ন দেখতে পেয়েছে তারা। এ পর্যালোচনাকারী দলের সদস্যরা আল শিফা হাসপাতালকে ‘মৃত্যুপুরী’ বলে উল্লেখ করেছেন।
আজ রোববার এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব কথা বলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বাধীন ওই পর্যালোচনা দলে আছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন বিভাগের রসদবিষয়ক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তাসংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে ১৮ নভেম্বর প্রতিনিধিদলটি মাত্র এক ঘণ্টা ওই হাসপাতালে অবস্থান করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দলটি হাসপাতালটিকে ‘মৃত্যুপুরী’ উল্লেখ করে বলেছে, সেখানকার পরিস্থিতি ‘শোচনীয়’। বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে হাসপাতালটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়, গোলা হামলা ও গুলির চিহ্নগুলো আলামত। হাসপাতালের প্রবেশপথে বড় একটি কবর দেখতে পেয়েছে দলটি। বলা হয়েছে, ৮০ জনের বেশি মানুষকে সেখানে কবর দেওয়া হয়েছে।
হলওয়ে ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণ বিভিন্ন বর্জ্যে ভরে গেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আল শিফা হাসপাতালে ২৫ স্বাস্থ্যকর্মী ও ২৯১ রোগী অবস্থান করছেন। এর মধ্যে ৩২ নবজাতকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিবৃতিতে বলা হয়, হাসপাতালটিতে এখনো যেসব রোগী, কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অবস্থান করছেন, তাঁদের অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং তাদের সহযোগীরা জরুরি ভিত্তিতে পরিকল্পনা করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতি কিংবা তাদের প্রতিনিধিদলের হাসপাতাল পরিদর্শন নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও বলেছে,গতকাল শনিবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী হাসপাতালটি খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। হাসপাতালটিতে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়া ২ হাজার ৫০০ মানুষ অবস্থান করছিলেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর নির্দেশের পর তাঁরাও সেখান থেকে সরে গেছেন।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী আল শিফা হাসপাতালে সরাসরি অভিযান চালিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গোপনে হাসপাতালটির ভূগর্ভস্থ জায়গায় ঘাঁটি পরিচালনা করছিল—এমন দাবি করে তারা হাসপাতালে তল্লাশি চালায়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, হাসপাতালের ভূগর্ভে হামাসের ঘাঁটি আছে বলে তারা প্রমাণ পেয়েছে। তবে আল শিফা হাসপাতালের কর্মীরা বলছেন, ইসরায়েল এমন কিছু প্রমাণ করতে পারেনি।
আল শিফা হাসপাতালের আশপাশে লড়াই চলছে। ঝুঁকি কমাতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিদল হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছে।
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও টেকসই মানবিক সহায়তা নিশ্চিতের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আবারও আহ্বান জানিয়েছে।