ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের জাতিবিদ্বেষ দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯৪ সালের আগের বর্ণবিদ্বেষের চেয়েও ভয়ংকর। এ বিদ্বেষের অবসান হতে হবে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দশকের পর কয়েক দশক ধরে চলা ইসরায়েলি দখলদারত্বও অবিলম্বে শেষ করতে হবে।
ইসরায়েলের দখল করা ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানিতে দেশগুলো এ দাবি জানিয়েছে। দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে বাংলাদেশসহ ১০টি দেশ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিয়ে যুক্তি উপস্থাপন করে।
গতকাল সোমবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে এ শুনানি শুরু হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হওয়া এ শুনানিতে পর্যায়ক্রমে ৫০টিরও বেশি দেশ ও ৩টি সংগঠন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। শুনানি চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ শুনানির সঙ্গে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার অভিযোগে আইসিজেতে করা দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার যোগসূত্র নেই।
১৯৯৪ সালের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ যেভাবে বর্ণ ও জাতিবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন, তার চেয়েও চরম মাত্রায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
আজ শুনানির শুরুতে কেন ইসরায়েলি দখলদারত্বের অবিলম্বে অবসান দরকার এ নিয়ে যুক্তি তুলে ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা। নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ভুসিমুজি ম্যাডোনেসলা আইসিজের ১৫ বিচারকের প্যানেলের সামনে বলেন, ১৯৯৪ সালের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ যেভাবে বর্ণ ও জাতিবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন, তার চেয়েও চরম মাত্রায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
ভুসিমুজি ম্যাডোনেসলা বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে (ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে) ইসরায়েলের অমানবিক বৈষম্যমূলক নীতি ও পদক্ষেপগুলো আরও গভীরভাবে অনুভব করতে পারি। আমার দেশের কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে যে বৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছিল, ফিলিস্তিনিরা তার চেয়েও চরমমাত্রার বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।’
ভুসিমুজি আরও বলেন, এটা স্পষ্ট যে ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারত্বের সঙ্গে অন্য দেশে গিয়ে উপনিবেশ গড়ার কোনো পার্থক্য নেই। ইসরায়েলি জাতিবিদ্বেষের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে জাতিবিদ্বেষী ঘটনা ঘটলে, সে বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং অবিলম্বে তার অবসান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষ বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জাতিসংঘে পাস হওয়া প্রস্তাব বারবার লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ ও ফিলিস্তিনিদের তাঁদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে অসম্ভব করে তুলছে।
সৌদি আরবের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত জিয়াদ আল–আতিয়াহ। তিনি বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। এ জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
জিয়াদ আল-আতিয়াহ বলেন, ফিলিস্তিনিদের মানুষরূপে গণ্য করে না ইসরায়েল। ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে এমন আচরণ করছে তাঁরা ‘যেন একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার বস্তু’।
সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতিসংঘে পাস হওয়া প্রস্তাব বারবার লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ ও ফিলিস্তিনিদের তাঁদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে অসম্ভব করে তুলছে ইসরায়েল। যদিও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এ নিয়ে বারবার নিন্দা জানিয়ে আসছে
সোমবারের শুনানি শুরুর দিনে শুধু ফিলিস্তিন আদালতে যুক্তি উপস্থান করে। আজ বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও সৌদি আরব ছাড়াও যুক্তি তুলে ধরেন আলজেরিয়া, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, চিলি, বেলিজ, বলিভিয়া ও ব্রাজিলের প্রতিনিধিরা। আজ কানাডার পক্ষ থেকেও যুক্তি উপস্থানের কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে জানানো হয়, দেশটি শুনানিতে অংশ নেবে না। কেন নেবে না, তা তাৎক্ষিণকভাবে জানা যায়নি।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারত্ব, অবৈধ বসতি স্থাপন ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করার অপতৎপরতা পর্যালোচনা করতে ২০২২ সালে আইসিজের প্রতি শুনানির আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। তাতে ইসরায়েলের দখলে থাকা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিয়ে আইসিজের নির্দেশনা ও মতামত চাওয়া হয়েছিল।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলায় ২৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার মধ্যেই আইসিজেতে এ শুনানি চলছে।