বিবিসি সাংবাদিকদের ফোন, ক্যামেরা ব্যবহারে বাধা দিচ্ছেন হিজবুল্লাহ সমর্থকেরা

লেবাননে একটি মোবাইলের দোকানে বিস্ফোরণের পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে, ১৮ সেপ্টেম্বরছবি: রয়টার্স

লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের এক দিন পর গতকাল বুধবার ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্য দিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর গোটা যোগাযোগ নেটওয়ার্কেই সম্ভবত অনুপ্রবেশ করেছে ইসরায়েল।

এমন অবস্থায় দেশটিতে যোগাযোগের কোনো যন্ত্রকেই এখন আর নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে না। এমনকি বিবিসির প্রতিনিধিরা লেবাননে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে হিজবুল্লাহর সমর্থকেরা তাঁদের কয়েকবারই বাধা দিয়েছেন। বিবিসির প্রতিনিধিরা যেন ফোন এবং ক্যামেরা ব্যবহার না করেন, সে দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

গত মঙ্গলবার লেবাননে কয়েক হাজার পেজারে বিস্ফোরণ হয়। এতে ১২ জন নিহত এবং প্রায় ২ হাজার ৮০০ জন আহত হন। পেজার হলো একধরনের তারবিহীন ছোট যোগাযোগযন্ত্র, যা হিজবুল্লাহর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। পরদিন বুধবার লেবাননে আবারও বিস্ফোরণ হয়। বুধবার যেসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর অধিকাংশই ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের ঘটনা। এদিন ২০ জন নিহত হন এবং ৪৫০ জন আহত হয়।

মঙ্গলবার কয়েক হাজার পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় এমনিতেই হতবাক এবং ক্ষুব্ধ হয় লেবাননের জনগণ। এর মধ্যেই ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের ঘটনা তাঁদের আরও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সামনে আর কী হতে পারে, তা নিয়ে ভাবছেন তাঁরা।

মঙ্গলবারের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া ইলিয়াস ওয়ারাক বিবিসিকে বলেন, ‘এটি ছিল আমার চিকিৎসকজীবনের সবচেয়ে বাজে দিন।’ তিনি বলেন, এ ঘটনার পর তিনি দেখেছেন আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের মধ্যে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ কমপক্ষে একটি চোখ হারিয়েছেন। অনেকে আঙুল হারিয়েছেন কিংবা পুরো হাতই হারিয়েছেন।’

ইলিয়াস ওয়ারাক আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, হতাহতের সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো আমরা অনেকগুলো চোখ বাঁচাতে পারিনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ক্ষয়ক্ষতি শুধু চোখের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকেনি। তাঁদের কারও কারও মুখমণ্ডলে ক্ষতির পাশাপাশি মস্তিষ্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত কয়েকজনের জানাজার ঠিক আগে বুধবার দানিয়েহ এলাকায় বিস্ফোরণ হয়। জানাজায় উপস্থিত হওয়া কয়েকজন শোকাহত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি।

এক তরুণ বিবিসিকে বলেন, ‘শরীরে ও মনে অনেক যন্ত্রণা বোধ করছি। তবে এটাতে আমরা অভ্যস্ত এবং আমরা আমাদের প্রতিরোধ জারি রাখব।’

৪৫ বছর বয়সী এক নারী বিবিসিকে বলেন, ‘এটা আমাদের আরও শক্ত করে তুলবে। যে ব্যক্তি একটি চোখ হারিয়েছেন, তিনি অপর চোখ নিয়েই লড়াই করবেন এবং আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।’

নতুন বিস্ফোরণের পর ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, তাঁর দেশ ‘যুদ্ধের নতুন ধাপের সূচনা পর্বে আছে’। বুধবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিজেদের ৯৮তম ডিভিশনকে গাজা থেকে উত্তর ইসরায়েলে স্থানান্তর করেছে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হামাস। এর জবাব দেওয়ার শপথ নিয়েছে তারা। তবে ইসরায়েল এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাত পুরোদমে যুদ্ধে রূপ নেয় কি না, তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহ ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে আরেকটি বড় যুদ্ধে জড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহী নয়। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে চলা অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে লেবানন। অনেকে বলছেন, তাঁরা সংঘাত চাইছেন না। তবে কেউ কেউ আবার কঠোর জবাব দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।

তবে হিজবুল্লাহ ঠিক কী পরিকল্পনা করছে, তার ইঙ্গিত হয়তো আজ বৃহস্পতিবার পাওয়া যেতে পারে। কারণ, আজ হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহ এসব ঘটনা নিয়ে প্রথম জনসমক্ষে কথা বলবেন।