বাশারকে উৎখাতই চূড়ান্ত লক্ষ্য

সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেন।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদছবি: এএফপি ফাইল ছবি

সিরিয়ায় বাশার আল–আসাদের সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা। তাঁদের অভিযানের মুখে আরেকটি শহর ছাড়তে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। এরই মধ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বে থাকা হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করাই তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এইচটিএস নেতা এসব কথা বলেন। সিরিয়ার অজ্ঞাত স্থান থেকে দেওয়া জোলানির এই সাক্ষাৎকার গতকাল শুক্রবার তাদের অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। বলা হচ্ছে, কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি।

আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সংগঠন থেকে বের হয়ে এইচটিএস গঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারকে অপসারণের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এইচটিএসের রয়েছে, সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে বিষয়ে কোনো সংশয় রাখেননি জোলানি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও ‘জনগণের পছন্দের পর্ষদের’ সমন্বয়ে একটি সরকার গঠনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

জোলানি বলেন, ‘যখন লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের প্রসঙ্গটি আসে, আমরা বলব, এই সরকারকে উৎখাতই বিপ্লবের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে সামর্থ্যের মধ্যে থাকা সব উপায় ব্যবহার করার অধিকার আমাদের রয়েছে।’

এইচটিএস নেতা আরও বলেন, ‘এই সরকারের পতনের উপাদান তার মধ্যেই সব সময় নিহিত ছিল। ইরানিরা এই সরকারকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল, সরকার কিছু সময় পেয়েছিল। পরে রুশরা সরকারের পতন ঠেকানোর চেষ্টা করে।’

সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠকে বসছেন তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

গত ২৭ নভেম্বর এইচটিএসের নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সরকারি বাহিনীর ওপর আকস্মিক হামলা শুরু করে। ঘটনার আকস্মিকতায় দৃশ্যত অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সরকারি বাহিনী। বিদ্রোহীরা সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে নেয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার মধ্যাঞ্চলীয় হামা শহর থেকে পিছু হটে সরকারি বাহিনী।

হোমস ছাড়ছেন বাসিন্দারা

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণে বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রার মুখে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় শহর হোমস ছাড়তে শুরু করেছেন হাজারো বাসিন্দা। গতকাল সকালেও এমন চিত্র দেখা গেছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করে আসা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এ কথাগুলো জানিয়েছে।

হোমস শহরটি রাজধানী দামেস্ক ও ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় এলাকার মাঝামাঝি কৌশলগত জায়গায় অবস্থিত। বিদ্রোহীরা এই শহরের নিয়ন্ত্রণ নিলে উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি এবার উপকূলীয় এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন প্রেসিডেন্ট আসাদ।

সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আজ শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। গতকাল তুরস্কের একটি কূটনৈতিক সূত্র এ কথা জানায়।

২৭ নভেম্বর এইচটিএসের নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করে।

অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক ভিডিও বার্তায় এইচটিএস নেতা জোলানি সিরিয়ার যুদ্ধ থেকে ইরাককে দূরে রাখতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে গত সোমবার সিরিয়াকে সাহায্য করতে ইরাক থেকে সেনা পাঠানোর অনুরোধ জানায় ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী কাতেব হিজবুল্লাহ। কাতেব ইরান-সমর্থিত সাবেক আধা সামরিক বাহিনীগুলোর জোট হাশেদ আল-শাবির অংশ। বর্তমানে গোষ্ঠীটি ইরাকের নিয়মিত সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ইরান-সমর্থিত প্রায় ২০০ ইরাকি যোদ্ধা সিরিয়ার সরকারকে সাহায্য করতে দেশটিতে ঢুকে পড়েছেন।