রাফার অর্ধেক ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েল
যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ উপেক্ষা করে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় বড় ধরনের স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। গতকাল শুক্রবার রাফার পূর্বাঞ্চল ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি ট্যাংক। পূর্ব ও পশ্চিম রাফাকে পৃথককারী মাঝামাঝি সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রাফার বাসিন্দারা বলেছেন, গতকাল প্রায় সারা দিন রাফার পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে গাজার হামাস ও ইসলামিক জিহাদ যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক লড়াই চলছে।
হামাস জানিয়েছে, রাফার পূর্বাঞ্চলে একটি মসজিদের কাছে একাধিক ইসরায়েলি ট্যাংকের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে তাদের যোদ্ধারা। এতে বোঝা যাচ্ছে, রাফা সীমান্ত থেকে কয়েক কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি ট্যাংক।
রাফা ছেড়েছেন লক্ষাধিক বাসিন্দা
গত সোমবার রাফার পূর্বাঞ্চল ছেড়ে যেতে বাসিন্দাদের নির্দেশ দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ফিলিস্তিনি রাফা ছেড়ে গেছেন বলে গতকাল জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ। শহরের বাইরে তাঁবু টানিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, গাজা উপত্যকার কোথাও এখন আর নিরাপদ নয়। সেখানে বসবাসের পরিবেশ খুবই বাজে। অবিলম্বে গাজায় আবারও যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাটি।
একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে পশ্চিম রাফার তাল আল-সুলতান এলাকার বাসিন্দা আবু হাসান (৫০) রয়টার্সকে বলেন, এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। রাফার কোনো অংশই এখন আর নিরাপদ নয়। গতকাল থেকে সর্বত্র ট্যাংকের গোলা পড়ছে।
আবু হাসান বলেন, ‘আমি রাফা ছেড়ে যেতে চাইছি। তবে পরিবারের জন্য ২০০০ ইসরায়েলি শেকেল (প্রায় সাড়ে ৬২ হাজার টাকা) দিয়ে একটি তাঁবু কেনার সামর্থ্য আমার নেই।’ তিনি আরও বলেন, এমনকি দখলদার বাহিনী কর্তৃক ঘোষিত রেড জোনে না পড়া সত্ত্বেও পশ্চিম রাফা থেকেও অনেকেই সরে যাচ্ছেন।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ও মিসরের মধ্যে একমাত্র ক্রসিংটির দখল নিয়ে রাফার পূর্বাঞ্চলকে দক্ষিণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে ইসরায়েল। গতকাল সালাহউদ্দিন সড়কে অগ্রসর হয় ইসরায়েলি ট্যাংক। এতে পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ‘রেড জোন’ ঘোষিত পুরো পূর্ব রাফা ঘিরে ফেলে ইসরায়েলি বাহিনী।
জাতিসংঘ সংস্থার দপ্তরে অগ্নিসংযোগ
পূর্ব জেরুজালেমে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ দপ্তরে অগ্নিসংযোগ করেছেন ওই এলাকায় বসতি স্থাপনকারী ইহুদি বিক্ষোভকারীরা। এরপর দপ্তরটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে জাতিসংঘ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি বলেছেন, যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতের আগপর্যন্ত দপ্তর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারের অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ছিল এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ঘটনা।
লাজ্জারিনি বলেন, এটি অত্যন্ত জঘন্য ঘটনা। আবারও জাতিসংঘের কর্মীদের জীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছিল। তিনি বলেন, জাতিসংঘের কর্মীদের ও স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অগ্রগতি নেই
কোনো ধরনের অগ্রগতি ছাড়াই মিসরের কায়রোয় সর্বশেষ দফার যুদ্ধবিরতি আলোচনা বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। কায়রো ছেড়েছে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদল। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন এই আলোচনার মধ্যস্থতা করা দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রধান উইলিয়াম বার্নস।
সোমবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় হামাস। তবে এ প্রস্তাব নিজেদের দাবির ‘অনেক বাইরে’ অভিযোগ করে তা প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল। একই সঙ্গে ওই দিনই রাফায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। যদিও পরদিন মাঝারি পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল কায়রোয় পাঠায় দেশটি।
একাই লড়তে চান নেতানিয়াহু
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির বিষয়টি এখন ইসরায়েলের হাতে। যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতেই ইসরায়েল রাফায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। অন্যদিকে মিত্ররা পাশে না দাঁড়ালে প্রয়োজনে একাই রাফায় অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।