ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় কয়েক দিন ধরে অভিযান চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল শুক্রবার পর্যন্তও এ অভিযান অব্যাহত ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। হাসপাতালটিকে হামাসের গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড সেন্টার প্রমাণে হন্যে হয়ে আলামত খুঁজছেন ইসরায়েলি সেনারা।
তবে বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন বলছেন, আল-শিফা হাসপাতাল হামাস কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করছে, এখন পর্যন্ত তেমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ ইসরায়েলি বাহিনী দিতে পারেনি।
জেরেমি বোয়েন বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, হাসপাতালের ভেতরে কী আছে, নিরপেক্ষভাবে তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা নেই। সাংবাদিকেরা গাজায় নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারছেন না। আর যাঁরাই ঘটনাস্থল থেকে খবর সংগ্রহ করছেন, তাঁরা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানেই কাজ করছেন।’
বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পাদক আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ইসরায়েল যে তথ্য-প্রমাণ হাজির করেছে, আমি বিশ্বাস করি না ইসরায়েলিরা হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যে ধরনের বাগাড়ম্বর করছিল, সে পরিপ্রেক্ষিতে এগুলো বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। তারা হাসপাতালটিকে হামাসের কর্মকাণ্ড পরিচালনার মূল কেন্দ্র বলে দাবি করে আসছিল।’
জেরেমি বোয়েন বলেন, যদি সেখানে মূল কেন্দ্র থেকে থাকে এবং ২০১৪ সাল থেকে সেই সম্ভাবনা সম্পর্কে জল্পনা-কল্পনা চলছে, তাহলে ইসরায়েলিরা এর অস্তিত্বের নিশ্চিত প্রমাণ এখন পর্যন্ত বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারেনি।
এখন পর্যন্ত সেখান থেকে কয়েকটি কালাশনিকভ বন্দুকসহ কিছু জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। টানেলের একটি প্রবেশমুখ দেখানো হয়েছে। টানেলের এ ধরনের প্রবেশমুখ গাজাজুড়ে বহু রয়েছে। কিছু সামরিক পোশাক আর বোমা পেতে রাখা একটি মোটরসাইকেল দেখানো হয়েছে।
জেরেমি বোয়েন মনে করেন, অবশ্য হাসপাতালের নিচে হামাসের বড় একটি সদর দপ্তর এবং তথ্য-প্রমাণের খোঁজ পাওয়াটা এখনো সম্ভব।
ইসরায়েলিরা যখন এ ভূখণ্ডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল, তখন ১৯৭০–এর দশকে হাসপাতালটি তারা নির্মাণ করে। সর্বোপরি এটি বড় একটি স্থাপনা। সম্পূর্ণভাবে তল্লাশি চালাতে সময় লাগবে।
এটা অনেকেরই জানা, ইসরায়েলি স্থপতিরা হাসপাতালটির নকশা করার সময় বিস্তৃত আকারে বেজমেন্টের ব্যবস্থা রেখেছিলেন।
আল-শিফায় অনেক কিছু নির্ভর করছে
এমনও হতে পারে, ইসরায়েলিরা সেখানে কিছু পেয়েছেন। তবে নিজেদের স্বার্থের কারণে এখনো প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেননি। সেটা হতে পারে সামরিক কিংবা নিরাপত্তাজনিত কারণ।
এটা স্পষ্ট নয়, কেন এমনটা হয়ে থাকতে পারে। কারণ, আল-শিফার এই অভিযানের ওপর ইসরায়েলের সফলতার অনেক কিছু নির্ভর করছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগ বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েল বলে আসছে, এই হাসপাতালে পৌঁছানো তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় হামাস গাজার চিকিৎসা–সম্পর্কিত স্থাপনাগুলো ব্যবহার করছে, এটা প্রমাণ করা ইসরায়েলের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ ধরনের অভিযোগ হামাস বারবার অস্বীকার করে আসছে।
গাজায় এত বেশি মানুষ হত্যার বিষয়টি ন্যায্যতা দিতে ইসরায়েল সবচেয়ে বড় যে অজুহাত দিয়ে আসছে, সেটা হলো, হামাস তাঁদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় ১২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাঁদের ৮ হাজারই নারী ও শিশু।