রাফায় অভিযানের বিরুদ্ধে পশ্চিমারা
ইসরায়েলি হামলায় মৃত্যু বেড়ে ২৮ হাজার ৭৭৫।
রাফায় অভিযানের ব্যাপারে আবার নেতানিয়াহুকে সতর্ক করলেন বাইডেন।
দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও মানবে না ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফা এলাকায় সেনা অভিযান না চালাতে বহুমুখী চাপের মুখে পড়ছে ইসরায়েল। এ অভিযানের সমর্থন দিচ্ছে না তাদের পশ্চিমা মিত্ররাও। এরই মধ্যে জার্মানির মিউনিখ শহরে বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলনে বসেছেন পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা। এই সম্মেলনে পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল আরও চাপের মধ্যে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ইরান, সৌদি আরব, মিসর, কাতার, জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ ছাড়া থাকবেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও।
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ইরান, সৌদি আরব, মিসর, কাতার, জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা থাকছেন।
গাজা সংকট নিয়ে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের চেয়ারপারসন ক্রিস্টোফ হুইসগেন আল-জাজিরাকে বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের প্রায় দেড় শ সদস্যদেশ আহ্বান জানিয়েছে। নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে উপত্যকাটিতে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও অভিযোগ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় সংকট নিরসনের একমাত্র পথ হলো যুদ্ধবিরতি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনকামী সংগঠন হামাস। এতে দেশটিতে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। এ ছাড়া প্রায় ২৪০ জনকে আটক করে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত ২৮ হাজার ৭৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত ৬৮ হাজার ৫৫২ জন। হতাহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ সময়ে ইসরায়েলি সেনারা দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের আল-নাসর হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছেন। এতে সেখানে থাকা চার রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ ও স্থল অভিযানের মুখে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় ১৫ লাখই এখন উপত্যকাটির একেবারে দক্ষিণে মিসর সীমান্তের রাফা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত শুধু রাফাতেই স্থল অভিযান চালায়নি ইসরায়েল। তবে এ অভিযান শুরু হলে সেখানে ‘হত্যাযজ্ঞ’ সংঘটিত হবে বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথসের। রাফায় অভিযান না চালাতে ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে দেশটির মিত্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ।
আশ্রয়শিবির তৈরি করছে মিসর
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বোমা হামলার মধ্যে ইসরায়েল এবার রাফায় স্থল অভিযান চালালে সেখানে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিরা সীমান্ত পেরিয়ে মিসরে চলে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে কায়রো। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় আশ্রয়শিবির তৈরি করছে দেশটি।
এমন কোনো পদক্ষেপের কথা অস্বীকার করেছে মিসর। এত দিন দেশটির সরকার বারবার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ইসরায়েলের হামলার মুখে ফিলিস্তিনিরা বাস্তুচ্যুত হয়ে মিসরের সিনাই উপত্যকায় আশ্রয় নিতে পারেন। একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে জর্ডানও।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে গতকাল জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন, শেষ পর্যন্ত যদি সত্যিই ফিলিস্তিনিরা রাফা ছেড়ে পালিয়ে সিনাই উপত্যকায় আশ্রয় নেন, তা হবে ফিলিস্তিনি, মিসর ও ভবিষ্যতের শান্তির জন্য ‘বিপর্যয়কর’।
রাফায় গতকালও ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাফায় আশ্রয় নেওয়া আহলাম আবু আসিরের ভাষ্য, ‘আমরা গাজা নগরী থেকে দক্ষিণে পালিয়ে এলাম। এরপর ইসরায়েল আমাদের রাফায় চলে যেতে বলল। সে অনুযায়ী রাফায় আসি। এভাবে আমরা তো আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকতে পারব না। আমাদের জন্য আসলে কোনো স্থানই নিরাপদ নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা নেতানিয়াহুর
গাজায় হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শেষে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে এক ফোনালাপে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে রাফায় অভিযান নিয়ে সতর্ক করেছেন জো বাইডেন।
এ নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে নেতানিয়াহু ও বাইডেনের দুবার টেলিফোনে কথা হলো। টেলিফোনে আলাপের পর এক্সে (সাবেক টুইটার) নেতানিয়াহু বলেছেন, যদি দেশগুলো একতরফাভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তা হবে ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা’। ফিলিস্তিনের সঙ্গে স্থায়ী সমঝোতার জন্য আন্তর্জাতিক কোনো নির্দেশ মানবে না ইসরায়েল।
এদিকে গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের নিয়ে মিসরে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আশার আলো দেখা যায়নি। পশ্চিমাদের আশঙ্কা, শিগগিরই যদি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যের সংঘাত না থামানো যায়, তাহলে ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা বাড়বে। এতে যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস ও ইসরায়েলকে একই টেবিলে বসানো কঠিন হয়ে পড়বে।